ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। মাগুড়া, দিনাজপুর ও সিলেটের ওসমানীনগরে তিনজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে দেড় শতাধিক। এছাড়া হাজার হাজার বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। পাশাপাশি শিলাবৃষ্টির আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল ও শাকসবজি।
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ে এসব ঘটনা ঘটে। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মাগুরায় শিলাবৃষ্টিতে একজনের মৃত্যু, আহত ২০
মাগুরায় বিকালে কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে গাছপালা এবং অন্তত ২০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে।
শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বড় বড় আকারে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় সদর উপজেলার ডহরসিংড়া গ্রামের আকরাম হোসেন (৩৫) ক্ষেতে কাজ করা অবস্থায় শিলাবৃষ্টির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে এলাকাবাসী উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শিলাবৃষ্টির কারণে সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নের মঘি, কালুপাড়া, লস্কারপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনকে মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রুপাটি গ্রামের অ্যাডভোকেট ময়েন উদ্দিন, মহরার সাহেব, হাসেম, ওলিয়ার, মোসলেম উদ্দিনসহ ২০ জনের ঘরের টিনের চাল ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ের কারণে মাগুরার সদর উপজেলায় বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে সঠিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান বলেন, শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণের চেষ্টা চলছে।
পার্বতীপুরে শিলাবৃষ্টিতে একজনের মৃত্যু
দিনাজপুরে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাথায় শিলাবৃষ্টির আঘাতে পার্বতীপুর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চৈতাপাড়া গ্রামের মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে সৈয়দ আলী (৫৫) মারা গেছেন। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। মারা গেছে অসংখ্য গবাদিপশু। দিনাজপুরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে শুরু হয় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি।
এতে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় সবকটি উপজেলায় এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হলেও সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, চিরিরবন্দর। এই কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার একর জমির গম, ভুট্টা, বোরো ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল এবং আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে শত শত ঘরবাড়িরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, ঝড়ের সময় সৈয়দ আলী তার নিজ ঘরের টিনের চালা সংস্কার করছিলেন। এ সময় মাথায় শিলার আঘাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক আবু নঈম মো. আবদুছ ছবুর শিলাবৃষ্টিতে একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে জানান, নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। মানুষ হতাহতের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে অসংখ্য গবাদিপশু মারা গেছে।
কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ওসমানীনগর, নিহত ১
সিলেটের ওসমানীনগরে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গোটা ওসমানীনগর এলাকা। ঝড়ের কবলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত গাছ উপড়ে পড়ে।
ওসমানীনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সহিদ উল্যা জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক ঘরের টিনের চালা উড়ে যায়। এ সময় উপজেলার তাজপুর ইউপির দশহাল গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে নূরুল আলমের নির্মাণাধীন ঘরের টিন উড়ে গিয়ে গলা কেটে সাবিয়া বেগম (৪৫) নামের এক নারী ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তিনি বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুর ইউপির সোনাপুর গ্রামের খালিছ মিয়ার স্ত্রী।
এদিকে ঝড়ে উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের ৯টি ফিডার লাইনের অর্ধশতাধিক খুঁটি উপড়ে পড়ে ও বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে গিয়ে গোটা ওসমানীনগর উপজেলা অন্ধকারে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-১ এর জোনাল অফিসের ডিজিএম জহিরুল ইসলাম।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে হিসাব এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
No comments:
Post a Comment