Social Icons

Thursday, March 29, 2018

অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাস; কিছু অঞ্চলে বাড়তি সুবিধা

প্রতিবছর অভিবাসী হয়ে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। এর মধ্যে ভারত ও চীনের অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। 
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী সংখ্যা দিন দিন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মূলত দক্ষ শ্রমিকরাই উন্নত জীবন যাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসে। এর বাইরেও অনেক ভাবেই অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসী হিসেবে নাগরিকত্ব পাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে কমন যেটাতে সবাই যায় তা হলো (Skilled – Independent (Migrant) Visa Subclass 175) । এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো স্পন্সর নাও থাকে, তবে শুধুমাত্র যোগ্যতা বা স্কিল যদি অস্ট্রেলিয়া সরকার ঘোষিত লিস্টের সাথে মেলে, বয়স ২৫-৫০ এর মধ্যে হয় এবং ইংরেজিতে দক্ষতা থাকে তাহলে সহজেই অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হওয়া সম্ভব।
আর পরের ধাপে ওদের এসেসমেন্ট পয়েন্ট টে্স্টে পাশ করতে পারলে এ পথ হয়ে যায় অনেকটাই উন্মুক্ত। এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকা, কাজ করা, পড়াশোনা করা, নাগরিক হওয়া এবং অন্য কাউকে স্পন্সর করার সুযোগ চলে আসে হাতের মুঠোয়।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চাইলে তাদের যে সিটিতে জনসংখ্যা কম সেই সিটিতে গেলে অনেক সময় বোনাস পয়েন্ট পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যেই তারা বোনাস পয়েন্ট অফার দিয়ে থাকে। যেমন তাসমানিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, কুইন্সল্যান্ড, নর্দান টেরিটোরী এই সিটিগুলোতে এখনও কম সংখ্যক অভিবাসী আছে। এই স্টেটগুলোতে অভিবাসী আকর্ষনের জন্য বোনাস পয়েন্ট দিয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়া সরকার। ফলে এখানে রেসিডেন্সি অর্জন অনেক সহজ হয়।
অষ্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্বের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো তিনটি। প্রথম টিআর বা টেমপোরারী রেসিডেন্সি। দ্বিতীয় পিআর বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি এবং শেষ ধাপে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যারা থাকেন তারা ভোটাধিকার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহন করতে পারেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব পেলে অস্ট্রেলিয়ার একজন নাগরিক হিসেবে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রথম এক বছরের মধ্যে ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে তেমনি ড্রাইভিং ও শিখে নিতে হবে। একটি চাকরি পেতে গেলেও এগুলো জানতেই হবে। এই সময়ের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করা, কোন ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত না হওয়া এবং নিয়ম কানুন মেনে চললে এক বছর পরে টিআর থেকে পিআর স্ট্যাটাস পাওয়ার সুযোগ আসবে। এ সময় নাগরিক হিসেবে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যেমন বেকার ভাতা, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষবৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করে থাকে একজন অভিবাসী।
পিআর হিসেবে থাকার সময়ে বিভিন্ন ধরণের শর্ট কোর্স, লং কোর্স, স্কিলড মাইগ্রেশন বিষয়ক কোর্স করা যায়। তাছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রীও অর্জন করা যায়। টিআর এবং পিআর এর চার বছর সময় অতিবাহিত হলে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্যতা অর্জিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে নিকটস্থ কাউন্সিলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে পারলে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। একজন অভিবাসী যখন নাগরিকত্ব পায় তখন তার হাতে আসে ঐ দেশের পাসপোর্ট, তখন সে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশ নিতে পারে এবং ভোটাধিকারসহ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ উন্মুক্ত হয় তার জন্য।
 অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। এই দক্ষতার রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যায়। প্রথমেই যে বিষয়টি দেখতে হবে তা হলো যে পেশায় যেতে ইচ্ছুক তা ওদের লিস্টে আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে শুরু করা যাবে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজগুলো। অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের জন্য তিনটি পর্যায়ে দক্ষতার মূল্যায়ন সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ।
এগুলো হলো- ১। শিক্ষাও অভিজ্ঞতা ২। ভাষা জ্ঞান ৩। বয়স। টোফেল ও এক্সেস পরীক্ষার স্কোর থাকলে আগে সহজেই অস্ট্রেলিয়ায় পিআর হিসেবে যাওয়া যেত। তবে এখন আর বিষয়টি অত সহজ নয়।
অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হলে ১২০ পয়েন্ট এর মধ্যে এ্যাসেসমেন্ট করে তবে অভিবাসনের অনুমতি মেলে। এর মধ্যে শিক্ষা ও দক্ষতায় ৭০, বয়সে ৩০ এবং ভাষা জ্ঞানে ২০ পয়েন্ট নির্ধারিত থাকে। তাই অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হলে ভাষা জ্ঞানে দক্ষ হতে হবে।
তাছাড়া আ ই এল টি এস – এ সব ব্যান্ড এ ৭.০+ পেলে ভালো হয়। তবে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশুনা না থাকলে, বয়স ৪৪ এর ওপর হলে, এবং স্ত্রী যদি গৃহিনী হন তবে পাশ নম্বর পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়। এই দেশে বয়সের গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা এরা মাধ্যমিক পাশের পরে ভকেশনাল কোর্স সম্পন্ন করে ১৭/১৮ বছর বয়সেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। সেজন্য এখানে কম বয়সি লোকদের প্রাধাণ্য বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রেই। এটাও সত্য অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের বিষয়ে মাঝে মধ্যেই নিয়মের পরিবর্তন হয়। যেমন এখন ইমিগ্রেশন পলিসি আগের চেয়ে অনেক কঠিন হচ্ছে। সেজন্য আমাদের যারা স্কিলড নাগরিক আছে তাদের খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া উচিত।
আমাদের দেশ থেকে যারা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চেষ্টা করছে তাদের জন্য স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়াটা সবচেয়ে সহজ। কেননা এ ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পাওয়াটাও অনেক সহজ হয়। অস্ট্রেলিয়ায় স্বলারশিপগুলো দিয়ে থাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কমনওয়েলথ, রোটারিসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। মূলত উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ফলে এ ধরনের দক্ষ লোকের কাজের সুযোগ এখানে অবারিত।
অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরিদাতাদের একটি প্রবণতা হলো অস্ট্রেলিয়াতে কাজের অভিজ্ঞতা যেমন থাকতে হবে তেমনি অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রী যা দেশ থেকে আসা কারো কাছেই থাকে না। এ কারনে নিজের ফিল্ডে চাকুরি খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই পড়তে হয় প্রচন্ড সমস্যায়। এমন অবস্থায় নিজের ফিল্ডে চাকুরি না পেয়ে অনেককেই মনোকষ্টে ভুগতে থাকেন। হয়তো দেশে ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারী আমলা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু এখানে এসে প্রথমেই চাকুরি না পেয়ে তাদের হয়তোবা রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে কাজ করতে হচ্ছে, ট্যাক্সি চালাতে হচ্ছে, সুপার মার্কেটে কাজ করতে হচ্ছে। দেশে এ ধরনের কাজকে ছোট করে দেখতে দেখতে মন মানসিকতা এরকমই হয়ে যায় যে তারা এখানে এসে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভুগেন।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের কাজকেই দেখা হয় সম্মানের চোখে। সবার জন্যই উন্মুক্ত পৃথিবী যেখানে আপনি নিজেও হয়ে উঠতে পারেন সফল একজন মানুষ। সেজন্য হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে যাওয়া উচিত। সময়ের সঙ্গে সফলতা নিশ্চয় ধরা দেবে আপনার।
লেখকঃ পরিচালক (অর্থ) মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ; ও শিক্ষক, নর্দান ইউনিভার্সিটি

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates