ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ও আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সম্পদশালী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬০এর দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি লাভের পর বানিজ্যের উপযোগী স্থল হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে নিবীড় অরণ্য ও বিস্তৃীণ তৃণভূমির এই দেশটির।
প্রথমে ইউরোপের অভিবাসীরা দেশটিতে ব্যবসায়ীক গোড়াপত্তন করে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়ার বড় একটি অংশ আফ্রিকার বাজারে বেশ দাপিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকায় অথনৈতিক মন্দা ও খনি ব্যবসায় দূরাবস্তা দেখা দিলে অথনীতিতে ধীরগতি নেমে আসে। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত হত্যা, হামলা ও ডাকাতির মত ঘটনা বেড়েই চলেছে দেশটিতে। বিশেষ করে যারা প্রবাসী ব্যবসায়ী তাদেরকে লক্ষ্য করে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে দুবৃত্তরা। প্রাণের ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সেখানকান অবস্থানরত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। আর এই নির্মমতার সবচেয়ে বড় শিকার সেখানকার প্রবাসী ব্যবসায়ী বাংলাদেশিরা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপর হামলা, হত্যা এবং অপহরণ এখন সেখানকার নৈমাক্তিক ঘটনা বলে জানান ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন। যিনি দ.আফ্রিকায় ব্যবসা করতে গিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে হামলার শিকার হয়েছেন ছয় বার।ডাকাতদের উৎপাত আর সেখানকার বাংলাদেশি দালালদের রেসারেসির শিকার হয়ে প্রাণনাশের ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে চলে এসেছেন বাংলাদেশে। ২০১৪ সালে গ্রামের এক বন্ধুর সন্ধানে ঢাকার এক দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে আফ্রিকার উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছিলেন।
প্রথমে দুবাই তারপর কেনিয়া, ইথিওপিয়া,নাইজার,মোজাম্বিক হয়ে দ.আফ্রিকা।অতিরিক্ত মুনাফা আর নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাবার চাষের জমি ও বসতভিটার কিছু অংশ বিক্রিও করেছিলেন। তারপর সেখানে গিয়ে জোহানেসবাগের প্রত্যন্ত গ্রামে মুদির দোকান দেন। বাংলাদেশি টাকায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় একটি মুদির দোকান করে নিবিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকমাস পর হঠাৎ কিছু লোক তার দোকানে এসে চাঁদা দাবি করে, দোকানের মাল-পত্র ভাংচুর করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর কিছু দিন পরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র আরেক প্রবাসীর দোকানে এসে হামলা চালায়। কয়েকটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। এভাবে প্রতি মাসে কোন না কোন ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা ও চাঁদা আদায় করে তারা। কেউ না দিতে চাইলে গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেয়। তবে এখন আর হুমকি নয় সরাসরি গুলি করে হত্যা করছে।’
৯০ এর দশকের পর দেশটিতে ব্যবসায়ীক অবস্থান ও অতিরিক্ত মুনাফা থাকায় দ. আফ্রিকায় পাড়ি জমাতে থাকে প্রচুর বাংলাদেশি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা অজন করা শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্ভব।কিন্তু বতমানে দেশটির অথনৈতিক অবস্থা আর মুদ্রাস্ফিতি কারণে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও অপহরণের মত ঘটনা বেড়েই চলেছে। এছাড়া দুবৃত্ত ও দেশিয় দালালদের চাটুকারিতায় ব্যবসায়ীক পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান সেদেশের অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীরা।আর এ কারণে প্রতিনিয়ত হত্যার মত জঘন্য ঘটনা ঘটছে।
অবশেষে মৃত্যুপুরী দ. আফ্রিকা ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ।
উল্লেখ্য সারা পৃথিবীর দালাল চক্রের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই রয়েছে সবচেয়ে বড় গ্রুপ । যারা কিনা যে কোন দেশের ডিজিটাল পাসপোর্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের ভিসা করে থাকেন ।সেই সকল দালালচক্রের সাহায্যে ইউরোপ ও আমেরিকার পথে পা বাড়াচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা । একটি সূত্রে জানা গেছে বেশিরভাগ অংশই চলে আসছেন ব্রাজিলের পথে ।দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত প্রবাসী ব্যবসায়ী বাংলাদেশিরা মৃত্যুপুরী দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে এখন পাড়ি জমাচ্ছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে ।তাদের ধারণা ব্রাজিলে ব্যবসা করে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবেন ।
No comments:
Post a Comment