বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পাওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান ফজলুর রহমানের বাড়ি বা আসবাবপত্র নেই। নেই কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী। নেই বৈদেশিক মুদ্রা।
ঢাকা-১ আসনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় তিনি এ তথ্যই দিয়েছেন। অথচ ২০১৭ সালের মার্চে প্রকাশিত চীনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুন গ্লোবালের তালিকায় ধনী ২ হাজার ২৫৭ জন ব্যক্তির মধ্যে তার অবস্থান ছিল ১ হাজার ৬৮৫তম।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, হলফনামায় অসত্য তথ্য বা তথ্য গোপন করলে এবং তা প্রমাণিত হলে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আগামীকাল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন নির্ধারিত রয়েছে।
সালমান এফ রহমান হলফনামায় নিজের নামে ৩৪ লাখ টাকার যানবাহন দেখিয়েছেন। কিন্তু তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে কোনো গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেননি। আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকের সম্ভাব্য এ প্রার্থী হলফনামায় নিজের নাম উল্লেখ করেছেন সালমান ফজলুর রহমান, বাবা ফজলুর রহমান, মা সৈয়দা ফাতিনা রহমান। স্থায়ী ঠিকানা-বেথুয়া, মুকসুদপুর, দোহার, ঢাকা।
দীর্ঘদিন ধরে জিএমজি এয়ারলাইন্সে ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকলেও সালমান এফ রহমান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, ‘আমি একক বা যৌথভাবে আমার ওপর নির্ভরশীল কোনো সদস্য অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে আমি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করি নাই।’
তবে সালমান রহমান আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী দায়-দেনার পরিমাণ ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪১০ টাকা উল্লেখ করেছেন।
হুরুন গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের সম্পদের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। যদিও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার অস্থাবর সম্পদে কোনো কৃষিজমি নেই।
নিজ নামে ২ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮৭ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ টাকার অকৃষি জমি আছে। ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ টাকার আবাসিক-বাণিজ্যিক দালান আছে নিজ নামে। স্ত্রীর নামে আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালান নেই। তবে স্ত্রীর নামে ২৫ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৯ টাকার বিল্ডিং কন্সট্রাকশন আছে।
স্থাবর সম্পত্তির বর্ণনায় তিনি বলছেন- নিজের কাছে নগদ ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আছে। আর স্ত্রীর কাছে নগদ আছে ৬০ হাজার টাকা। নিজের কাছে, স্ত্রীর কাছে কিংবা নির্ভরশীল কারও কাছেই বৈদেশিক মুদ্রা নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১২৮ টাকা নিজ নামে এবং স্ত্রীর নামে ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ টাকা জমা আছে।
স্ত্রীর নামে না থাকলেও নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার আছে ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৬ টাকার। নিজের নামে বাস, ট্রাক, মোটর গাড়ি, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান ও মোটরসাইকেল ইত্যাদি আছে ৩৪ লাখ টাকার। নিজের নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি আছে ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকার। আর স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার।
হলফনামায় সালমান এফ রহমান বার্ষিক আয় হিসেবে ব্যবসা থেকে ৬ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত ডিভিডেন্ট থেকে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৮ টাকা, চাকরি (সম্মানী ভাতা) থেকে ৪১ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ার ও আইএফআইসি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার বাবদ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকা আয় দেখিয়েছেন। তিনি ও তার স্ত্রী কোনো রকম সুদ ছাড়াই আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা ঋণ দিয়েছেন।
সালমান এফ রহমান ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে হেরেছেন। ২০০৬ সালে এক-এগারো সরকারের সময় গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে ছাড়া পান।
এর আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচিত না হওয়ায় সালমান এফ রহমানের প্রতিশ্র“তি পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়নি হলফনামায়।
No comments:
Post a Comment