রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষক হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার বিকালে এই শিক্ষকের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ। হাসনা হেনা ছিলেন অরিত্রীর ক্লাস টিচার।
এর আগে দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে ডিবি পুলিশ হাসনা হেনাকে আদালতে হাজির করে। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কামরুল হাসান।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম জামিন আবেদন করে বলেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন। তার সম্পর্কে বাদী কোনো অভিযোগও করেন নাই। প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর (অরিত্রী) অভিভাবককে ডাকতে বলায় উনি ডেকেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
এর আগে বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেল থেকে হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, আমার কাজ হলো কোনো মেয়ে যদি ঝামেলা করে তাহলে তার বাবা-মাকে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে মোবাইল পাওয়ায় আমি তাই করেছিলাম। অধ্যক্ষ আমাকে যা বলেছেন আমি তাই করেছি।
উল্লেখ্য, সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে (১৫)। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রীর সঙ্গে তারা স্কুলে যান। তারা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে যান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করেন। এসময় মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। প্রিন্সিপালও ভাইস প্রিন্সিপালের মতো আচরণ করেন। সেখানে গিয়ে তারা ক্ষমা চান। তারপরেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।
দিলীপ অধিকারী বলেন, এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে তিনি স্ত্রীসহ বাড়ি গিয়ে দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।
এরপর মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর পল্টন থানায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা দায়ের করেন অরিত্রির বাবা।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অরিত্রীর বাবা-মা আবেদন নিয়ে এলে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শিফট ইনচার্জ (প্রভাতী শাখা) জিনাত আক্তার, শ্রেণি শিক্ষক- এই তিনজন ভয়ভীতি দেখান। তার বাবা-মা’র সঙ্গে অধ্যক্ষ ও শিফট ইনচার্জ নির্মম আচরণ করেন। যা অরিত্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বহুদিন ধরে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নিয়ম অনুসরণ করে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি।
No comments:
Post a Comment