ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক যুগান্তরকে বলেন, ‘জেন্ডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমাদের কখনোই চাওয়া ছিল না নারী নির্যাতিত হোক পুরুষের দ্বারা। একইভাবে আমাদের চাওয়া পুরুষও কারো দ্বারা নির্যাতিত হবে না। অর্থাৎ কেউ কারো দ্বারা নির্যাতিত হবে না, পুরুষের দ্বারাও নয়, নারীর দ্বারাও নয়। বর্তমানে সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলাচ্ছে। তাই এখানে অনেক ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে।
পরিবর্তন আনতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা এ ধাক্কাটা খাচ্ছি যে, ‘পুরুষকে’ চিন্তা করা হয় সমাজের রোল মডেল! পুরুষ যা যা করছে, সেটি করাটাই হচ্ছে লক্ষ্য। মানে পুরুষ হওয়াটাই নারীদের ইচ্ছা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাকে পুরুষ হতে হবে, পুরুষ চিৎকার করে কথা বলে, তার আক্রমণাÍক মনোভাব, সে অন্যদের নির্যাতন করে। তাই আমাকেও যেন তাই করতে হবে। এটা কিন্তু কারও প্রত্যাশা নয়। বরং পুরুষ নারীকে মানুষ ভাববে, নারী পুরুষকে মানুষ ভাববে।
নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে নারী পুরুষকে অতিরিক্ত সুবিধা দিবে না বা পুরুষকে নিগৃহীতও করবে না। আবার পুরুষও নারীকে নিগৃহীত করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে। এখন সামাজিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
এই জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বলেন,আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, সমাজে নারী এখনও পুরুষের চেয়ে দুর্বল। কিন্তু এটার মানে এটা নয় যে, সব নারীই দুর্বল। এটা আশা করাটাও ভুল। নারীদের মধ্যেও শক্তিশালী ও শক্তিহীন নারী রয়েছে। অন্যদিকে সব পুরুষ নির্যাতনকারী এই কথাটি ভুল, সব নারী নির্যাতিত হয় এই কথাটাও ভুল। সব ক্ষমতাশালী পুরুষ যেমন নির্যাতন করে না, তেমন সব ক্ষমতাশালী নারীও নির্যাতন করে না। সবার কথা বলব না, কিছু নারী ‘পুরুষ’ হয়ে উঠছে। আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা পুরুষ হয়ে ওঠাকেই ভাবে তছি মানুষ হয়ে ওঠা! কারণ পুরুষ হতে পারলেই আমি ক্ষমতাবান হতে পারব। পুরুষ রোল মডেল হওয়ায় এখন অনেক নারীও নির্যাতন করেন। কারণ পুরুষও নির্যাতন করে। নির্যাতন কখনোই আকাক্সিক্ষত জায়গা না। নারীর ক্ষমতায়নের চর্চা করতে যেয়ে কিছু সংখ্যক নারী ‘পুরুষ’ হয়ে উঠতেছে। সকলকে ‘মানুষ’ হওয়া উচিত। তা হলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : এম এস আই খান
No comments:
Post a Comment