শিক্ষকের হাতে সহপাঠীর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অভিভাবকদের মনেও চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক আইয়ুব আলীর(৪৪) শাস্তির দাবিতে শনিবার বিক্ষোভ করেছে। একই সঙ্গে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও দাবি জানিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, তাদের দাবি মানা না হলে স্কুলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকার হুমকিও দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
প্রাইভেট পড়ানোর নামে বাসায় ডেকে এক ছাত্রীকে (১৫) যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গত মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের গণিতের শিক্ষক আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। মামলার পরপরই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সেই শিক্ষক আইয়ুব আলীকে এবং পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে, আদালতে ভিকটিম সেই ছাত্রী ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এরপর অভিযুক্ত আইয়ুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এ ঘটনা জানাজানি হতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এবং অবিলম্বে ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দেয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘটনার পর ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের পক্ষ থেকে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিপীড়নের জন্য দায়ী শিক্ষক একজন কলঙ্কিত শিক্ষক। তার হাতে কেউ নিরাপদ নয়। তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় স্কুলে ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এই ঘটনায় স্কুলের কলেজ শাখায়ও প্রভাব পড়েছে। তারাও দুইদিন যাবৎ কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত। এমন হলো ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে।'
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্কুলছাত্রী প্রাইভেট পড়তে যেতে পারিনি। এ কারণে পেছনের 'গ্যাপ' পূরণের জন্য শিক্ষক আইয়ুব ওই ছাত্রীকে একা তার বাসায় প্রাইভেট পড়তে যেতে বলে। সেই অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় স্কুলছাত্রী ওই শিক্ষকের বাসায় যায়। এর ১৫ মিনিট পর শিক্ষকের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাসার বাইরে গেলে শিক্ষক ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ছাত্রী রাজি না হওয়ায় তার হাত ও পোশাক ধরে টানাটানি করে এবং এক পর্যায়ে ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন নিপীড়ন করে। এ সময় মেয়েটি চিৎকার করার চেষ্টা করলে শিক্ষক ছাত্রীকে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভয় দেখায়। পরে বাসায় এসে মেয়েটি তার পরিবারের কাছে ঘটনা খুলে বলে।
সেই শিক্ষক আইয়ুব আলী এখন কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা জানার জন্য বেশ কয়েকবার স্কুলে ল্যান্ডফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে সেই প্রান্ত এখন পর্যন্ত কোনো রকম সাড়া-শব্দ বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment