Social Icons

Sunday, February 25, 2018

মাথা ঘোরা ও হৃদরোগের সম্পর্ক


বহুবিধ কারণে মানুষের মাথা ঘুরতে পারে, তন্মধ্যে বেশ কিছু কারণে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মাথা ঘুরতে পারে, যেমন ধরুন পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে, অত্যধিক উষ্ণ পরিবেশে কাজ করলে, অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ হলে, মহিলাদের গর্ভকালীন। এ ধরনের মাথা ঘোরা স্বল্পমেয়াদিভাবে হয়ে থাকে এবং ব্যক্তি খুব চট-জলদি এ ধরনের মাথা ঘোরা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে থাকেন। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেইন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলুর, রক্তে লবণের ঘাটতি, লো-প্রেসার ইত্যাদি জটিল অসুস্থতা থেকে ব্যক্তির মাথা ঘুরতে পারে এবং এ ধরনের মাথা ঘোরা প্রায় ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কেন মানুষের মাথা ঘোরে? যদি কারও মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, তবে রক্ত সরবরাহের কমতির জন্য স্নায়ুকলাগুলো তার বিপাকীয় কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পাওয়ায়, মস্তিষ্কের বিপাকীয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়। মানুষের মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ মানব শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। অক্সিজেনের অভাবে ওইসব অংশ ঠিকমতো কর্মসম্পাদন করতে না পারায় মানুষের মাথা ঘুরতে পারে এবং পরিস্থিতি জটিল হলে মানুষ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় মাথা ঘোরার প্রধান কয়টি কারণ হলো— হৃদরোগ এবং হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। হৃদরোগের কারণে ব্যক্তির হার্টের স্পন্দন বা নাড়ির গতি অত্যধিক বেড়ে যেতে পারে, মানে নাড়ির গতি প্রতি মিনিটে ১২০ অথবা ১৫০ অতিক্রম করলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের কমতি দেখা দেয়, ফলশ্রুতিতে মাথা ঘুরতে থাকে। যেমন হার্ট ফেইলুর  মাইয়োকার্ডাইটিস, কার্ডিওমাইয়োপ্যাথি, রক্তে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্যজনিত হৃদরোগ, সুপ্রাভেন্টিকোলার টেকিকার্ডিয়া (SVT), বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ ইত্যাদি কারণে নাড়ির গতি বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে মাথা ঘোরে এবং এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির রক্তচাপ অত্যধিক কমে যায়। হৃদরোগের অনেক পর্যায়ে ব্যক্তির নাড়ির গতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে এবং এ ক্ষেত্রেও ব্যক্তির রক্তচাপ অত্যধিক কমে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, যার ফলশ্রুতিতে মানুষের মাথা ঘুরে থাকে। হার্ট ব্লক, বয়সজনিত কারণে, রক্তে থাইরয়েড হরমোনের কমতিজনিত কারণে হৃদরোগ, হার্ট স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক, রক্তে লবণের ভারসাম্য নষ্ট হলে নাড়ির গতি কমে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশ কিছু মেডিসিন নাড়ির গতি অস্বাভাবিক হারে হ্রাস করে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ Propranolol, Betaprolol, Bisoprolol, Caruidelol, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনে ব্যবহৃত ওষুধ Verapamil, Ameoderon, Veracal, Pacet etc. এ অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমিয়ে গ্রহণ করে মাথা ঘোরা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এ ধরনের ওষুধ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা মোটেই উচিত হবে না।
রক্তচাপ অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে মানুষের মাথা ঘুরতে পারে এবং এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, অস্থিরতা ও অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। রক্তচাপ অত্যধিক বেড়ে গিয়ে মাথা ঘুরলে একে ব্রেইন স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরি। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে রক্তচাপ কমানোর জন্য Lasix নামক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং রোগীকে শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।
যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের রক্তচাপ অত্যধিক কমে গিয়ে মাথা ঘুরতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে তাত্ক্ষণিকভাবে খাবার সেলাইন খাওয়ানো যেতে পারে। তবে খাবার সেলাইন এক দুইবারের বেশি খাওয়ানো ঠিক হবে না এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। অনেক সময় এ ধরনের অবস্থায় রক্তচাপের ওষুধের মাত্রা কমালে মাথা ঘোরানো থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে, তবে কোনো অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ একবারে বন্ধ করা যাবে না এতে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates