উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে ‘স্মার্টকার্ড’ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২ অক্টোবর, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ২ অক্টোবর দিন ঠিক হয়েছে। ওইদিন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে।”
প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগরী ও একটি প্রত্যন্ত এলাকাকে স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য বেছে নেওয়া হবে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, “উদ্বোধনের পর বিতরণের সার্বিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে জানানো হবে। প্রথমে ঢাকার প্রায় অর্ধকোটি নাগরিক ও একটি পিছিয়ে পড়া এলাকায় বিতরণ শুরু হবে।”
স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি এলাকায় ক্যাম্প করে কার্ড বিতরণ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়া হবে। আগের লেমিনেটেড পরিচয়পত্রটি সে সময় ফেরত দিতে হবে নাগরিকদের।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি ৯ কোটির হাতে লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে ঢাকা সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও সবশেষে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের পর দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতেও তা বিতরণ করা হবে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ওই সময়ই বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
নাগরিকদের ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ দিতে গত বছরের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। দেড় বছরেও এনআইডি বিতরণ শুরু করতে না পারায় মে মাসে ‘জরুরি ভিত্তিতে উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম’ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে তাগাদা দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
এরপর গত ২ অগাস্ট স্মার্টকার্ডের প্রযুক্তি ও কারিগরি দিকসহ সার্বিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানায় ইসি। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে মানুষ কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে, তা প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জান মো. সালেহ উদ্দিন জানান, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র করে পরিচয় দিন গর্ব ভরে’ স্লোগান নিয়ে সেপ্টেম্বরে নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার সব প্রস্তুতি তারা শেষ করেছেন। ইতোমধ্যে ঢাকার ১০টি নির্বাচনী থানায় প্রয়োজনীয় স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কোথায় কীভাবে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে- সে বিষয়ে বিস্তারিত সূচি পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আয়কর দাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর প্রাপ্তি ও নবায়ন, পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও নবায়ন, চাকরির জন্য আবেদন, স্থাবর সম্পত্তি কেনা-বেচা, ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ প্রাপ্তি, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারি ভর্তুকি, সাহায্য, সহায়তা প্রাপ্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে ই-গেইট এর মাধ্যমে আগমন ও বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ গ্রহণ, মোবাইল ও টেলিফোন সংযোগ গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকেটিং, সিকিউরড ওয়েব লগ ইন, ই-ফরম পূরণে নাগরিকের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোজনের কাজে ১০ ডিজিটের এই স্মার্টকার্ড ব্যবহার করা যাবে।
No comments:
Post a Comment