Wednesday, August 31, 2016
বেকার নায়কদের ভিলেনগিরি
‘মানুষ মরে গেলে পচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণে অকারণে বদলায়, বারবার বদলায়’। কথাটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’-তে বলে গেছেন। গতিশীল এ জীবনে নানা কারণে মানুষকে বদলে যেতে হয়। সেই সঙ্গে নানা কারণে বদলে যায় তার পেশাগত দিক। শোবিজ অঙ্গনের মানুষের বদলে যাওয়ার দিকটা চোখে পড়ে আরও বেশি। কয়েক বছর আগেও এফডিসিতে পরিচালক যাদের পিছনে পিছনে ঘুর ঘুর করেছেন তাদের অনেককেই এখন পরিচালকের কাছে ধর্না দিতে হয়, কাজের জন্য। বেঁচে থাকার জন্য। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। চরিত্রের গভীরতা থাকুক আর না থাকুক, কাজ করতেই হবে! এক সময়ের দাপট দেখানো অনেক নায়ক-নায়িকাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। হাতে কাজ না থাকায় আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা কারও কারও। কেউ কেউ তো একেবারেই অন্তরালে চলে গেছেন। ঢাকাই ছবির এমন অনেক নায়কই রয়েছেন যাদের একসময় সিনেমাঙ্গনে দাপুটে বিচরণ ছিল। তার ছবি মানেই সুপার ডুপার হিট। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই হিট নায়কই হয়ে গেছেন বেকার নায়ক। তাই বাধ্য হয়ে সিনেমাঙ্গনে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কেউ বেছে নিয়েছেন টিভি পর্দা। কেউ ছেড়ে দিয়েছেন অভিনয়, কেউ বা আবার চলচ্চিত্রের খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন। সিনেমার নায়ক থেকে ভিলেনের কাতারে দাঁড়ানোর তালিকায় সত্তর ও আশির দশকের নায়ক থেকে নব্বই দশকের আলো ছড়ানো নায়কেরাও রয়েছেন। তবে সত্তর-আশির দশকের নায়কদের চেয়ে নব্বই দশকের নায়কদের ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করার উদাহরণই বেশি। কারণ এ সময়ের পর থেকে ঢাকাই ছবির বাজার পড়তে শুরু করে। ফলে অনেক নায়কের হাত থেকে ফসকে যেতে থাকে ছবির কাজ। বেকার হয়ে পড়তে থাকেন নায়কেরা। বেকারত্ব গুছাতে অনেকে আবার খুলে বসেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কেউ আবার টিভি পর্দায় মুখ দেখানো শুরু করেন। এ তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ওমরসানী, আলেক জান্ডার বো, অমিত হাসান, মেহেদি, শাকিল খান, রিয়াজ ও আমিন খান। এদের মধ্যে রিয়াজ ও আমিন খান নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে ছোট পর্দার অভিনেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। বর্তমানে মাঝে মাঝে উৎসবকেন্দ্রিক নাটকগুলোতে তারা। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ওমর সানী। স্ত্রী মৌসুমী এখনও চলচ্চিত্রে আলো ছড়াতে থাকলেও ওমরসানী এক প্রকার বেকার হয়েই বসে আছেন। কয়েক বছর আগে অত্যধিক মুটিয়ে যাওয়ার কারণে সিনেমার কোনো চরিত্রেই আর ফিরতে পারছিলেন না তিনি। তাই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সিনেমার ভিলেন হয়ে ফের পর্দায় আসেন ওমারসানী। কিন্তু ভিলেন হয়েও শংকিত ছিলেন। পরে স্বাস্থ্য কমিয়ে অনেকটা নায়কোচিত চেহারা ফিরিয়ে আনলেও নায়ক হিসেবে ডাক পাননি সিনেমায়। ফলে এক প্রকার বেকার হয়ে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদারের মতোই এফডিসি পাড়ায় বিচরণ করতে হচ্ছে তাকে। তবে ইদানীং কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অংশ নিলে এ ক্ষেত্রেও তেমন আলোচিত হতে পারছেন না সাবেক এ নায়ক। তাই বর্তমানে ঢাকাই ছবির বেকার নায়কদের তালিকায়তেই থাকতে হচ্ছে ওমরসানীকে। এক সময় নায়ক হিসেবে বেশ পরিচিতি মুখ ছিল অমিত হাসান। মূলত বিরহ ধারার ছবি করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নায়ক হিসেবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে তাকে। নায়কের মতো খলনায়কের ভূমিকাতেও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। কারাতে মাস্টার রুবেল এখনও নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তবে মাঝে মাঝে ভিলেনের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। তবে ভিলেন হলেও তার মধ্যেও একটি ইতিবাচক চরিত্র পাওয়া যায়। মাঝে অশ্লীল সময়ের নায়ক খেতাব পাওয়া আলেক জান্ডার বো। দীর্ঘদিন সিনেমা থেকে আড়ালে থাকার পর হঠাৎ করেই খলনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। এক্ষেত্রেও তেমন আলোচনায় আসতে পারেননি তিনি। এখনও আড়ালেই রয়েছেন এ নায়ক। একসময়ের আইটেম গানের নায়ক মেহেদী। তিনিও বর্তমানে ভিলেন চরিত্রে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তার চেষ্টা খুব একটা সফল হয়ে ধরা দেয়নি। মোট কথা নিজেদের নামের সঙ্গে অভিনেতা শব্দটি বাঁচিয়ে রাখতেই চলচ্চিত্রের নায়ক না হলেও খল চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহ সাবেক এ নায়কদের মধ্যে। কিন্তু নায়ক থেকে খল চরিত্রে অভিনয় করা এ নায়কদের খুব একটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না দর্শকরা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment