সমুদ্রকে আর সমুদ্রের লোনা নীলচে পানির ছোঁয়াকে ভালোবাসেননা এমন খুব কম মানুষই আছেন। আর সমুদ্রের নীলচে মায়া যদি হয় আমাদের ভালোলাগার অন্যতম একটি উত্স, তবে সমুদ্র সৈকতগুলোও কিন্তু এদিক দিয়ে কম যায়না। দেশ-বিদেশের জমকালো ও অনিন্দ্যসুন্দর সব সমুদ্র সৈকতগুলো প্রতি বছরই টাকে হাজার হাজার পর্যটককে। আজ আপনাদের শোনাব এমনই দুই সমুদ্র সৈকতের কথা। তবে আর দশটা সৈকতের চাইতে একটু যেন আলাদাই এই সমুদ্র সৈকতগুলো। কীভাবে? চলুন তবে দেখে আসি।
১. কাঁচের সমুদ্র সৈকত
দিনের পর দিন কেউ যদি কোথাও ময়লা আর নোংরা ফেলে রাখে তাহলে সেটাকে কী বলা যায়? নিশ্চয় ভাবছেন- কী আবার? ডাস্টবিন! কিন্তু এবারে যে সমুদ্রসৈকতের কথা বলব তার বেলায় কিন্তু এবারে এর উল্টোটাই ঘটেছে। ঠিক কবে থেকে সমুদ্রের তীরে গৃহস্থালী ও এর বাইরের সব রকমের আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছিল সেটা সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই কারো। যেহেতু নিজেদের আবর্জনাগুলো সরিয়ে ফেলার জন্যে শহরের প্রশাসকদের কোন ব্যবস্থাই ছিলনা তখন তাই অন্য কোন উপায় না দেখে শহরের মানুষেরা পাশের স্থানীয় সমুদ্রের তীরে নিজেদের সব আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলত পাহাড়ের চূড়ার ওপর থেকে। ১৯৬০ এর দিকে টনক নড়ে শহরের হর্তাকর্তাদের। আবর্জনার স্তূপ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা বীচটিতে আর কোন ময়লা না ফেলার কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। বীচের আবর্জনাগুলো সরাতে গিয়ে সেটা বুঝতে সময় লাগেনা কারো। তবে একটা অদ্ভূত বিষয় দেখতে পায় তারা এসময়্ বীচের বেশীরভাগ জায়গাটা বিভিন্ন কাঁচের গোলাকৃতি টুকরো দিয়ে ভরা। কোন রঙ নেই সেখানে! লাল, নীল, সবুজ, খয়েরী- সব রকমের কাঁচ প্রাকৃতিকভাবেই বাতাস আর পানির ঘর্ষণে নির্দিষ্ট আকৃতি পেয়ে গিয়েছিল ততদিনে। যেগুলো পরিষ্কার করাটা বেশ কঠিন আর নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হল কর্তৃপক্ষের। ফলাফল এই হল যে, কাঁচগুলোকে ঠিক একইভাবে রেখে দেওয়া হল বীচের পাড়ে আর বীচটির নাম দেওয়া হল- গ্লাস বীচ! যেটি কিনা বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট ব্র্যাগের ঠিক পাশেই অবস্থিত।
২. যে সৈকতের সমুদ্রটাই নেই
বলছিলাম হলেও স্পেনের প্লায়া ডি গুলপিউরির কথা। ধোঁয়া থাকলেই যেমন মনে করা হয় সেখানে আগুন আছে, ঠিক তেমনি সৈকত থাকলেই সেখানে সাগর থাকবে সেটা তো জানান কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। চারপাশের পাথুরে তৃণভূমির ভেতরে আটকে থাকা এই জলাধারে নীলচে পানি দেখতে পাবেন আপনি, দেখতে পাবেন লবনাক্ত সেই পানিতে সমুদ্রের ঢেউ এর মতন খেলে যাওয়া ঢেউও। কিন্তু সমুদ্রটিকে খুঁজে পাবেননা চারপাশে তন্ন-তন্ন করে চাইলেও। কিন্তু সমুদ্র ছাড়া একেবারে আটকানো এক জায়গার ভেতরে এমনটা কি করে সম্ভব? এই তো ভাবছেন? না! ব্যাপারটা কোন অলৌকিক কিছু নয়। নয় কোন মানবসৃষ্ট ব্যাপারও। বরং নিজের মতন করে মানুষকে চমকে দিতে এভাবেই ছোট্ট এক উপসাগর তৈরি করে নিয়েছে প্রকৃতি স্পেনের উত্তর মধ্য উপকূলে অবস্থিত ছোট্ট শহর লায়ানসে।
সমুদ্রকে ধারে-কাছে না দেখতে পাওয়া গেলেও মূলতঃ সমুদ্রের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এই গুলপিউরিতে। আর সে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে সবার চোখের আড়ালে, মাটির নীচ দিয়ে। সমুদ্র থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত গুলপিউরির নীচেই রয়েছে এর পানি সরবরাহকারী লুকোনো গুহা। সেই গুহা দিয়েই ক্যান্টাব্রিয়ান সাগরের বিসকে উপসাগর থেকে অবিরত নিজের প্রয়োজনীয় পানিটুকু পেয়ে আসছে গুলপিউরি সেই জন্মলগ্ন থেকে। ভালো করে খেয়াল করলেই এর পানিতে খানিক পরপর ঢেউ এর আভাস দেখতে পাবেন আপনি। কখনো কখনো তো সেটা অনেকটা বড়সড় আকারেই দেখা দেয়। আছড়ে পড়ে ফেনিল পানি মাটির ওপরে। অশান্ত ঢেউ আর টলটলে নীলচে পানি- ইচ্ছে হতেই পরে যে কারো একটাবার ডুব দিয়ে আসতে। তা সেটা করতেই পারেন আপনি। মানুষের কাছে বর্তমানে সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত নির্জন এক সমুদ্রহীন বীচে পরিণত হয়েছে গুলপিউরি। একটু অন্যরকম হলেও যাকে সমুদ্রহীন সমুদ্র সৈকত বলাই চলে!
No comments:
Post a Comment