নজিরবিহীনভাবে নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগানোর পরও বারবার আদালতের কাছে ধাক্কা খাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ গতকালও সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর ট্রাম্পের জারি করা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন দেশটির একটি ফেডারেল আদালত।
আর আদালতের ওই স্থগিতাদেশের পর নিজের টুইটারে ওই বিচারককে প্রায় ‘দেখে নেওয়ারই’ হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বাধ্য হয়েই কি না সুর নরম করে সীমান্তে ‘সতর্ক’ তল্লাশির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের টুইটারের সূত্র ধরে এ নিয়ে আজ সোমবার সকালে একটি খবর প্রকাশ করে বিবিসি। সেখানে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের কর্মকর্তাদের ‘খুবই সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
টুইটে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ‘আদালত কাজ করাকে খুবই কঠিন করে দিচ্ছেন।’ এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে ওই বিচারকদের ‘দায়ী করা উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার সিয়াটল শহর আদালতের বিচারক জেমস রবার্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রে ওই সাত দেশের নাগরিকরা চলাচল করতে পারবেন। তিনি মিনেসোটা ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলদের আবেদন আমলে এনে এ রায় দেন। এরপর গতকাল রোববার সানফ্রান্সিসকোর আপিল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি অগ্রাহ্য করে সিয়াটল আদালতের আদেশ বহাল রাখেন।
বিমান সংস্থাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বলে দিয়েছে, ওই সাতটি দেশের লোকদের যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে যেন উঠতে দেওয়া হয়। এই খবর পেয়ে উপসাগরীয় বিমান সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজ বিমানে যাত্রী ওঠানো শুরু করছে বলে জানিয়েছে।
এর আগে এক নির্বাহী আদেশে সিরিয়া, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প।
এদিকে আদালতের আদেশের পর হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, স্বদেশকে রক্ষা করতেই প্রেসিডেন্টের ওই আদেশ, সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে রক্ষার জন্য সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ স্থগিত করায় আদালতকে চ্যালেঞ্জ করবে হোয়াইট হাউস। সেইসঙ্গে মুসলিমবিরোধী আদেশকে ‘আইনসম্মত ও যথাযথ’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে হিলারি ক্লিনটনকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদ্যবিদায়ী বারাক ওবামার বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করে দেন। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘ওবামাকেয়ার’। এ ছাড়া মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নর্থ ডাকোটায় তেল পাইপলাইন নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যদিও বিক্ষোভের মুখে বারাক ওবামা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দিনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এদের বেশির ভাগই নারী। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
ভোটগ্রহণের আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। অনেক নারী সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে এক নারী যৌন হয়রানির মামলা করেছেন।
No comments:
Post a Comment