সৌদি আরবে গত কয়েকদিনে দেশটির পুলিশের হাতে আটক হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার প্রবাসী। আটকদের মধ্যে কত সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।দেশটিরে বিভিন্ন প্রদেশে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে বৈধ প্রবাসীরাও রয়েছে আতঙ্কে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে যারা পরিবার নিয়ে দেশটিতে অবস্থান করছেন। কারণ যে কারণে প্রবাসীদের আটক করা হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো আকামা (রেসিডেন্ট পারমিট)নবায়ন।নিদিষ্ট সময়ে আকামা নবায়ন না করতে পারলে ৫০০ রিয়াল জরিমানার বিধান করেছে দেশটি। দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় ২৪ লাখ বাংলাদেশির মধ্যে আড়াই লাখ প্রবাসী রয়েছে অবৈধ। যাদের অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন আবার অনেকে দুর্গম মরুভূমিতে পালিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কাজে যোগ দিতে পারছে অনেকেই।ইতোমধ্যে সৌদিতে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত অবৈধ বাংলাদেশিদের সৌদি ছাড়তে আহবান জানিয়েছেন। কারণ সৌদি সরকারের এই চলমান আটক অভিযানে অবৈধ এবং আইন অমান্যকারীরা ঠিক কি ধরণের শাস্তির মধ্যে পড়বেন তা এখনও জানেন না এসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ফলে যেসব বৈধ শ্রমিক রয়েছে তারাও আছেন বিপাকে। তবে সৌদি সরকার বৈধ প্রবাসীদের কোন ধরণের ভয় নেই বলে জানালেও অনেকে এ বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
সৌদি আরবের জেদ্দায় কাজ করেন নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বাংলাদেশি জানান, আমরা যেখানে থাকি সেখান থেকে পুলিশ অনেক বাংলাদেশিকে আটক করেছে। যাদের অনেকের ভিসা নবায়ন কিংবা পাসপোর্ট জটিলতা এখন সমাধান হয়নি।তবে পাসপোর্ট আছে এমন অনেক বাংলাদেশিরাও ভয়ে পালিয়ে গেছে। যারা এখনও কাজে যোগ দেয়নি।তারা ফোন করে যোগাযোগ করছে পুলিশ চলে গেছে কিনা। কারণ দেশটির পুলিশের ঘোষণা অনুযায়ী যারা সৌদি নাগরিকদের মাধ্যমে কাজ নিয়েছে কিংবা অবৈধভাবে বিভিন্ন কোম্পানি কাজ করছে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মিরাজ হোসেন থাকেন মক্কা নগরীতে। মিরাজ এখন নিজের কর্মস্থলে না গিয়ে দুই দিন আগে মরুভূমির পরিচিত এক ভারতীয় বন্ধুর সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘ছয় বছর আগে সৌদি আরবে এসেছি। দেড় বছর ধরে আমার কাগজপত্র নেই। বাড়িতে যাব বলে আর কাগজ বৈধ করা হয়নি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এত দিন পার করতে পারলেও এখন খুবই ভয়ে আছি। দুই দিন আগে মরুভূমিতে কর্মরত এক ভারতীয় বন্ধুর কাছে আছি। আমার সঙ্গে আরো চারজন আছে, যাদের কাগজপত্র নেই। ’ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসী আটকে সৌদি আরবজুড়েই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে মক্কা ও রিয়াদে সৌদি পুলিশের অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, বৈধকর্মীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। ’ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সৌদি গেজেট জানায়, অভিবাসী ও শ্রমিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সৌদি আরবে তিন দিনে প্রায় ২৪ হাজার অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অভিবাসী আইনে ১৫ হাজার ৭০২ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা আইনে তিন হাজার ৮৮৩ জনকে আটক করা হয়। আর চার হাজার ৩৫৩ জনকে শ্রমিক আইনে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে কোন দেশের কতজন নাগরিক রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। গেজেটে আরো বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে ৪২ শতাংশ মক্কা নগরী থেকে এবং ১৯ শতাংশ রিয়াদ থেকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরে ১১ শতাংশ আসির, ৬ শতাংশ জাজান ও ৫ শতাংশ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো থেকে আটক করা হয়। অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে সৌদিতে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯৪ জনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আট হাজার ৪৩৩ জনকে সৌদি আরবের প্রবাসী দপ্তরে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাত হাজার ৪৯১ জন পুরুষ ও ৯৪২ জন নারী। আর অবৈধভাবে প্রবেশে সহায়তা করার অভিযোগে ২৫ সৌদি নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন সৌদি সরকারের অভিনব পদ্ধতিতে দেশটিতে অবৈধ শ্রমিক প্রবেশের পদ্ধতি দেখে।
কারণ যেসব প্রবাসীদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদেরকে মোটা অঙ্কের জরিমানা এবং জেল দিয়ে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার। সেই সাথে অবৈধ এসব অভিবাসীরা পূণরায় যাতে সৌদিতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য তাদের কাছ থেকে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে যেন তারা আর সৌদি আরবে প্রবেশ করতে না পারে। তবে নিদিষ্ট সময় শেষে সৌদি সরকারের তিন দিন মেয়াদ বাড়ানোর কথায় অনেক প্রবাসী শ্রমিক আকামা নবায়ন করার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সৌদি সরকারের এই কঠোরতা প্রবাসীদের উপর আরোপ করা হলে বেশি বিপদে পড়বেন বাংলাদেশিরা। কারণ অন্য দেশের তুলনায় বড় একটি অংশ রয়েছে অবৈধদের তালিকায়।
No comments:
Post a Comment