একজন মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মস্তিষ্ক। বলা হয়ে থাকে, মস্তিষ্কই মানব শরীরের সবচাইতে বৃহৎ অঙ্গ। এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে আমাদের জীবনের প্রতিদিনে ঘটে থাকা সকল ধরনের কার্যকলাপ। একই সঙ্গে মস্তিষ্কে যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং এর ওপরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ দায়িত্ব।
সকালে নাস্তা নাখাওয়া
সারাদিনের মাঝে সকালের নাস্তা খাওয়া সবচাইতে জরুরি। সারারাত ঘুমানোর ফলে অনেক লম্বা সময় ধরে না খেয়ে থাকা হয়। এরপরে সকাল বেলা সঠিকভাবে নাস্তা না খেলে অথবা একেবারেই না খেলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। সকালে নাস্তা না খাওয়ার অভ্যাস অনেক লম্বা সময় ধরে গড়ে তুললে, সেটা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে ফেলে।
অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস
যেখানে বলা হচ্ছে সকালের নাস্তা না খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে থাকে, সেখানে আরো একটি কথা বলতেই হবে- অতিরিক্ত খাওয়াও মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন করে। অনেক বেশী পরিমাণে খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের আর্টারিগুলো শক্ত হয়ে ওঠে। যার ফলাফল স্বরূপ মানসিক শক্তি কমে যায় অনেকখানি।
ধূমপান করা
আমরা সকলেই জানি ধূমপান স্বাস্থ্যে জন্যে ক্ষতিকর। তবে ধূমপানের সবচাইতে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর দিক হলো ‘Multiple brain shrinkage.’ এই সমস্যার ফলে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনে ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পরে যায়। এছাড়াও আলঝেইমার রোগের জন্যে ধূমপানকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করা
অনেক বেশী পরিমাণে চিনি গ্রহণের ফলে শরীরে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ গ্রহণ করার ক্ষমতাতে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ও উন্নয়নে সমস্যা দেখা দেয়।
বায়ুদূষণ
এটা এমন একটি ব্যাপার যেটা একজন মানুষের পক্ষে পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলে প্রায় অসম্ভব। তবে ক্ষেত্র বিশেষে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত একজন মানুষের প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করা প্রয়োজন শারীরিক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য। যে কারণে অক্সিজেন এর অভাব দেখা দিলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায় অথবা মারা যায়। প্রতিনিয়ত দূষিত অক্সিজেন নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহনের ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে।
কম ঘুমানোর অভ্যাস
দীর্ঘ সময়ব্যাপী ঘুমের অভাবের ফলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। যেখানে মস্তিষ্কের কোষকে সজীব রাখা প্রয়োজন যথাসম্ভব লম্বা সময় ধরে। ঘুম মস্তিষ্ককে বিশ্রাম ও পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে থাকে। যে কারণে, প্রতিদিন নিয়ম মতো আট ঘন্টার ঘুম খুবই প্রয়োজন ও জরুরি।
ঘুমানোর সময় মুখ ঢেকে রাখা
ঘুমানোর সময় মুখ ঢেকে ঘুমালে, ঘুমের কোন সমস্যা না হলেও অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। যার ফলে মস্তিষ্ক অনেক লম্বা সময় ধরে অক্সিজেনের অভাব বোধ করতে থাকে।
অসুস্থতার মাঝেও কাজ করা
আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি, যেখানে প্রতিটা দিন যেন নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। সফলতা পাবার জন্যে সকলেই দৌড়াতে ব্যস্ত। এতো ব্যস্ততার মাঝেও কখনো কখনো অসুস্থতা ঘিরে ধরে আমাদের। কিন্তু বেশীরভাগ সময় এই অসুস্থতা নিয়েই ছুটে চলতে হয় আমাদের। যেখানে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়া মানেই, সে সংকেত দিচ্ছে ‘এখন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন’, সেখানে আমরা সবকিছু উপেক্ষা করেই ব্যস্ততার মাঝে ডুবে যাই। শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কিংবা পড়াশোনা চালিয়ে সেটা মস্তিষ্কের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে থাকে।
চিন্তাভাবনার অপ্রাতুলতা
সাধারণভাবেই, আমরা যদি চিন্তাভাবনা না করি এবং মস্তিষ্ককে কাজে না লাগাই, তবে মস্তিষ্ক নিজ থেকে সংকুচিত হয়ে যায়। চিন্তাভাবনা করা খুবই শক্তিশালী ও উপকারী একটি হাতিয়ার। যা মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম এবং মস্তিষ্কের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে।
কথা কম বলা
পূর্বেই বলা হয়েছে, চিন্তাভাবনা না করার ফলে মস্তিষ্ক নিজ থেকেই সংকুচিত হতে শুরু করে। ঠিক সেভাবেই, মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলার মাধ্যমেও মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে এবং মস্তিষ্ক বেড়ে ওঠে। বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়।
No comments:
Post a Comment