Tuesday, November 28, 2017
সাইপ্রাসে স্টুডেন্ট ভিসার ফাঁদে বাংলাদেশিরা
উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ ভ্রমন। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে টাকা উপা। তার ওপর যদি থাকে ইউরোপ যাওয়ার সম্ভনা! তাহলেতো কথাই নেই। দেশের যুব সমাজের মাঝে বিদেশে উচ্চশিক্ষার আকাঙ্খা অনেক আগে থেকেই। পড়া-লেখার পাশাপাশি যদি থেকে যাওয়ার সুযোগ করে নিতে পারে, তবে যেন স্বপ্নের দুয়ার খুল গেল। শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্নকে পুঁজি করে দেশের বাজারে তৎপর এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী। উচ্চশিক্ষার আড়ালে সাইপ্রাসে কর্মী পাঠাচ্ছে তারা। সাইপ্রাস যেতে পারলেই ইউরোপ আমেরিকায় যাওয়া নিশ্চিত। ইউরোপ আমেরিকার স্বপ্নের টানে ভিটেমাটি বিক্রি করে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব অফিস খুলে বসেছে এসব প্রতারক চক্র। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। রাতারাতি গজিয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের সরকারী কোন অনুমোদন নেই। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন পত্রিকায় বা সাইনবোর্ডে অথবা পোস্টারে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে অনেক ছাত্র আকৃষ্ট হয়ে সাইপ্রাস যাচ্ছেন। এদের সঙ্গে ছাত্র বেশে পাঠানো হচ্ছে অনেক শ্রমিক। শুধু দেশে নয়, সাইপ্রাসে থাকা একটি দালাল চক্রের সহায়তায় চলছে এ ব্যবসা।
এমনিতেই জনশক্তি রফতানি খাতে প্রতারণা চরম আকার ধারণ করেছে। দালাল চক্রের এটি একটি নতুন ফন্দি। এতদিন লিবিয়া ও ইরাকের রুট ব্যবহার করে লোকজনকে ইউরোপ-আমেরিকার লোভ দেখিয়ে লিবিয়ায় আটক করে রাখা হতো। পরিবারের কাছ থেকে নেয়া হতো মুক্তিপণ। আবার যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন, তাদের অনেককেই সলিল সমাধি বরণ করতে হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, দালাল চক্র সাইপ্রাসে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগের প্রলোভন দেখায়। প্রতিঘণ্টা কাজের জন্য ১০ ইউরো করে দেয়া হবে। এই টাকায় তাদের লেখাপড়া, খাওয়া চলে যাবে। কিছু টাকা দেশেও পাঠাতে পারবে, আর ইউরোপ-আমেরিকায় যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তো রয়েই গেছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। সাইপ্রাস একটি দ্বীপ দেশ। যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার সুযোগ থাকলেও কাজের সুযোগ অনেক কম। আর অবধৈ পথে ইউরোপ বা আমেরিকায় যাওয়ার পথও বেশ কঠিন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন অভিবাসন নীতি আর ইউরোপ জুড়ে আর্থিক মন্দার মাঝে সেসব দেশে প্রবেশ পথও প্রায় বন্ধ। অবৈধদের ধরতে নিয়মিতই চলে অভিযান। তাই অনেককেই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে থেকে যেতে হয় সাইপ্রাসে। সেখানেও জীবন পদ্ম কোমল নয়। বেঁচে থাকার সংগ্রামে মুখ থুবড়ে পড়তে হয় বার বার। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সে দেশে ছাত্ররা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। কিন্তু সেদেশের সরকার বিদেশি ছাত্রদের কাজের অনুমতি দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুমতি ছাড়া কেউ কোথাও গোপনে কাজ করলে দিতে হয় জরিমানা, অনেক সময় জেলও খাটতে হয়। এ জন্য বেশিরভাগ বিদেশী ছাত্র চরম বিপাকে পড়ছেন। বাসা ভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার খরচ মেটানোই এখন তাদের জন্য চরম কষ্টের।। এরপরও অসচেতনায় অনেকেই দালাল চক্রের হাতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ছুটছেন সোনার হরিণের পেছনে। ইউরোপ-আমেরিকার স্ব্প্ন নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন সাইপ্রাসের মত দেশে। প্রতারিত হয়ে, কাটাচ্ছেন দুর্বিসহ কষ্টের দিন।
Labels:
আন্তর্জাতিক,
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment