এশিয়ার স্বপ্নের দেশখ্যাত সিংঙ্গাপুর বাংলাদেশিদের অন্যতম গন্তব্যস্থল। কিন্তু বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশিদের অবস্থান অনেকটাই নরবরে হয়ে গেছে সেখানে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা যত বড় চাকরিই করুক না কেন সবাই তাদের সন্দেহ করছে।
বাংলাদেশিরা প্বািআরবি সিটিজেন হলেও তাদের অবস্থান এখন আর খুব বেশি ভালো নয়। জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্বপ্নের সিঙ্গাপুরে অভিযুক্ত হয়েছিল ২৭ জন বাংলাদেশের নির্মাণ শ্রমিক। যা নিয়ে এক নতুন সংকটের সূচনা হয় বছরের শুরুতেই। কিছুটা চমকে ওঠার মতো ছিল খবরটি। এই ২৭ জন বাংলাদেশি সেখানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে দেশে পাঠানো হয়।
সিঙ্গাপুর সরকারের ভাষ্যমতে: ওই বাংলাদেশিরা আল-কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের মত জিহাদি মতাদর্শে বিশ্বাসি। এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন সিংঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম’সিঙ্গাপুরের সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘যারা কাজের ভিসা নিয়ে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে তারাও দূরভাগ্যরকমের প্রতারিত হচ্ছে স্বদেশিদের কাছে। সিংগাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মূল খরচ যদি হয় দুই হাজার ডলার তাহলে এক শ্রেণির দালাল চক্র নিয়ে থাকে আট থেকে দশ হাজার ডলার। এতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি দারুন ভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
আর এসব বিষয় সিংগাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও অবগত। তাদের জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। প্রতারণা সহ নানা ধরণের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি সিঙ্গাপুর জেলে আছে এবং একবার যদি সাজা হয় তাহলে পরবর্তিতে আর কখনও তারা সিঙ্গাপুর যেতে পরবে না। তিনি আরো বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে অনেকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখা আছে। কিন্তু ব্যাংকের রেট কম হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠায়। ফলে বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সিঙ্গাপুর থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর ফলে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে গেছে। চোরাকারবারিরা কোন কারণে বিমানবন্দরে ধরা পড়লে প্রবাসীরা আর ঐ টাকা পায় না।
প্রায় প্রতি মাসেই বিমান বন্দরে স্বর্ণের অবৈধ চালান ধরা পড়ছে। ধরা পড়লে চোরাচালানকারী পাসপোর্ট রেখে পালিয়ে যায়। এমন ঘটনা হর হামেশাই ঘটছে। আর সিঙ্গাপুরে অনেক বাংলাদেশি রাঘব বোয়ালই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ধরা পড়ে সাধারণ বাংলাদেশিরা যারা মাত্র দশ বারো হাজার বেতনে চাকরি করে ঐইসব ব্যবসায়িদের প্রতারিত হচ্ছে। মূলত অভাব অনটনের কারণে চাকরি করতে হয়। তারাই ধরা পড়ে জেলে যায়। ডলার কেনা বেচায় যেখানে লস হওয়ার কথা সেখানে দুই তিন টাকা লাভ হচ্ছে হুন্ডির কারণে । আর এই সব রাঘব বোয়ালদের ঢাকার বিভিন্ন জায়গাতেও একাধিক অফিস আছে ।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘আর যারা কাজের ভিসায় সিঙ্গাপুর গিয়েছেন তাদের অনেকেই নিয়মিত কাজ করেন না। অনেক সময় অসুস্থ্যতার কথা বলে কাজে না গিয়ে হুন্ডির টাকা কালেকশন করেন। আবার কেউ কেউ স্বর্ণের চোরাচালানির কাজ করেন। মূলত এ ধরণের বিভিন্ন অভিযোগের ফলে নতুন করে আর বাংলাদেশিদের কাজে নিতে চান না সেখানকার মালিকরা। এখন তারা বাংলাদেশিদের চেয়ে চীনাদের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি পালটে যাবে বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে কাজের জন্য যাবেন, তারা যেন কোন বেআইনী কাজে না জড়ান সেদিকে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে ও দূরদর্শি হতে হবে।
No comments:
Post a Comment