জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
এ মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দি ও মামলার অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, তিনি দোষী, না নির্দোষ? এর জবাবে খালেদা বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আত্মপক্ষ সমর্থনে আমি আরো কিছুদিন বক্তব্য দিতে চাই। ’
এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়া কোনো কাগজপত্র জমা দেবেন কি না, তা জানতে চান বিচারক। এর জবাবে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন মনে করলে’ তিনি কাগজপত্র জমা দেবেন; একই সঙ্গে সাফাই সাক্ষীও দেবেন।
গতকাল নিজেকে নির্দোষ দাবি করার মধ্য দিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে একই আদালতে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে ষষ্ঠ দিনের মতো প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ট্রাস্টের তহবিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম—এমন কোনো বক্তব্য রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষী দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে দুটি অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে আপনি (বিচারক) দেখতে পাবেন এই দুটি রিপোর্ট দুই ব্যক্তির হলেও বাক্য ও শব্দচয়ন অভিন্ন।
’ তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তা সত্ত্বেও দুদক কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো তথ্যপ্রাপ্তি ছাড়াই এজাহার রুজু করেছেন। আমাকে ও আমার রাজনৈতিক দলকে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তিনি মিথ্যা তথ্য এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। আর তাঁর এই মিথ্যা বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি রাজনৈতিক দল আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছে। ’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা, বাদী ও অনুসন্ধানকারী হারুন অর রশীদকে একজন ‘ইন্টারেস্টেড সাক্ষী’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ‘হারুন অর রশীদ অতি উৎসাহী ও আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। তিনি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে নিজেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট দাখিল করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফলে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। ’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘হারুন অর রশীদ ২০০৫ সালে (বিএনপি আমলে) চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ কারণেই তাঁকে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়। তিনি স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশনা অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আমার বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ’
বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মামলার কার্যক্রম দুই সপ্তাহ মুলতবি রাখতে আবেদন জানান এবং তাঁর স্থায়ী জামিনের জন্য আরেকটি পৃথক আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম যথারীতি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।
No comments:
Post a Comment