নিজেদের উন্নয়নের জন্য ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার আশায় প্রতিদিন প্রচুর বাংলাদেশি পাড়ি দিচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু আগের তুলনায় বাংলাদেশিদের মধ্যে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে অবৈধ প্রবাসীদের অনেকে বিভিন্ন দেশে আটক হয়ে শরণার্থী হিসেবে সে দেশে বসবাস করছে। যে উন্নয়নের জন্য তারা বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলো সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। অবৈধ প্রবাসীদের বিষয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলো ফিনল্যান্ডের শরণার্থী ক্যাম্পে আটক কিছু বাংলাদেশি।
এসব বাংলাদেশি জানায়, বিপুল টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত পেরিয়ে ফিনল্যান্ডে আসা বেশির ভাগেরই আশ্রয় হয়েছে শরণার্থী ক্যাম্পে। তবে হাতেগোনা কয়েকজন রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। আবার অনেকে কাজ করার সুযোগ পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের ফিনল্যান্ডে কাজ হিসেবে জুটছে রাস্তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর পত্রিকা বিলির মতো ছোটখাটো কাজ। কিছু বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। সামান্য বেতনের বিনিময়ে মাসের পর মাস কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তারপর আছে নানামুখী মানসিক অত্যাচারতো রয়েছেই।
বাংলাদেশ থেকে আগত কয়েকজন শরণার্থীর বিভিন্ন সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগ ইউরোপ আসেন ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও রাশিয়া হয়ে। আবার অনেকে ইরান-তুরস্ক হয়ে ইউরোপ প্রবেশ করেছেন। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন পথে ইউরোপ পাচার হয়েছেন। এছাড়া অজানা সংখ্যক শরণার্থী মাঝসমুদ্রে নৌকা ডুবে, কেউ অত্যাচারে অথবা কেউ খাবারের অভাবে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ শরণার্থী দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তালিকায় সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার কোটি লোক শরণার্থী হচ্ছে। তবে এই সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, সমস্ত পৃথিবীব্যাপী। সাম্প্রতিক সময়ে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও ইউরোপের নানা দেশে, বিশেষ করে গ্রিস–জার্মানি–ইতালির উদ্দেশে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াও এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে। ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশ বিশেষ করে মেক্সিকো থেকে স্থলপথে দুর্গম এলাকা পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকে।
এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া—সব মহাদেশকেই গ্রাস করছে এই মানব পাচার সমস্যা। কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডের গহীন বনে অভিবাসন প্রত্যাশীদের কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। ইউরোপ যাত্রায় সমুদ্রে হাজার হাজার মানুষের সলিলসমাধি সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সম্প্রতি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি এক মানব পাচারকারীকে ফিনল্যান্ড পুলিশ ধরতে সমর্থ হয়েছে। তবে সংগত কারণে তার বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করেনি। তার নিবাস রাশিয়ার মস্কো বলে জানা গেছে। তবে একই ভাবে বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের ধরতে বিভিন্ন ধরেন অভিযান চালাচ্ছে ফিনল্যান্ড পুলিশ। তবে এতে বৈধ উপায়ে অবস্থিত বাংলাদেশিদের নানা ধরনের হয়রানিরে শিকার হতে হচ্ছে।
নাজমুল হাসান নামে এক বাংলাদেশি বলেন, এভাবে শরনার্থীর সংখ্যা মূলত অবৈধ প্রবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাংলাদেশের উপর একপ্রকার নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে ফিনল্যান্ড সরকারের। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ সরকার অতিদ্রুত ফিনল্যান্ড সরকারের সাথে সমঝোতা করে এর একটি সঠিক সমাধানে আশা উচিত। এতে বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের সুসর্ম্পক যেমন বজায় থাকবে একই সাথে সেই দেশে আটক বাংলাদেশিরাও নিজের দেশে ফেরত আসতে পারবে। তাই অতিদ্রুত এ বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি আশা আরেন নাজমুল হাসানসহ ফিনল্যান্ডে আটক অসংখ্যা বাংলাদেশিরা।
No comments:
Post a Comment