জেদ্দা থেকে মোঃ নুরে আলম -------- সৌদি আরবে বসবাসরত প্রবাসীদের ওপর নিত্যনতুন করের বোঝা দিন দিন বাড়ছেই। বর্তমান
সৌদি সরকারের করের ফাঁদে পড়ছেন এইসব প্রবাসীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুবছর তেলের দরপতনের কারণে বাজেট ঘাটতির প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি পুষিয়ে নিজেদের অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে রক্ষা করতে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করে দেশটি, যার অংশ হিসেবে এ কর আদায় কর্মসূচি চলছে। ফলে সৌদি আরবে বসবাস করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে প্রবাসীদের। বিশেষত পরিবারের সব সদস্যদের ওপর কর আরোপ করায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেছেন পরিবার ও পরিজন নিয়ে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। করের হাত থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যেই অনেক ব্যবসায়ী তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেক সদস্যকে গত জুলাই থেকে মাসিকভিত্তিতে ১০০ রিয়াল করে কর দিতে হচ্ছে, যা বছর বছর বাড়ানো হবে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই কর হবে ২০০ রিয়াল, ২০১৯ সালে হবে ৩০০ রিয়াল আর ২০২০ সালে হবে ৪০০ রিয়াল। নিয়মের বেড়াজালে ফেলে প্রবাসীদের হটিয়ে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে চায় সৌদি আরব। তাই প্রবাসীরা কাজ করে এমন কোম্পানির ওপর আগেই করারোপ করেছে সৌদি সরকার। বছরে বছরে এ করও বাড়বে।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলা গ্রামের মোখলেছুর রহমান ১৯৯৭ সালে সৌদি আরব যান। তিনি জেদ্দা শহরের বালাদ মার্কেটে রেডিমেট গার্মেন্টসের ব্যবসা করেন। স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। ব্যবসার আয় দিয়েই সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার খরচ চালান। প্রতিমাসে কিছু টাকা বাংলাদেশে স্বজনদের কাছেও পাঠান। তবে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে সৌদি সরকারের কর আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বেকায়দায় পড়েছেন প্রবাসী মোখলেছুর রহমান। তিনি চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ৬০০ রিয়াল করে কর পরিশোধ করে আসছেন। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তাকে কর বাবদ প্রতি মাসে গুনতে হবে এক হাজার ২০০ রিয়াল। তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার সদস্য প্রতি কর আরোপ করায় প্রবাসীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়। কর আরোপের পর থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে। আগে মাসে এক থেকে দেড় লাখ রিয়াল বেচাকেনা হতো, এখন হয় মাত্র ২০ হাজার রিয়াল। ফলে প্রতি মাসেই গুনতে হচ্ছে লোকসান। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের সদস্যদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমিও ডিসেম্বরের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মদিনা শহরের বাঙালিপাড়ার বাংলাদেশ খেজুর শপের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরবে প্রবাসীদের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে। বিশেষ করে কর আরোপের পর এই অস্থিরতা আরও বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে দেশে চলে গেছেন। বাংলাদেশিরা সৌদি আরব এসে এখন আর কাজও পাচ্ছেন না।’ সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মাসিহ্ এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো সৌদি আরবেও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব চলছে। ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ী দেশে চলে যাচ্ছেন। তবে কর আরোপের কারণে এখনও রেমিট্যান্সে প্রভাব পরেনি।’ তবে ভিন্ন কথা বললেন সৌদি আরবের ব্যবসায়ী বাংলাদেশের চাঁদপুরের মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন সৌদি আরবে থেকে কোনও লাভ নেই। করের বোঝা টানতে গিয়ে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। সংসারের খরচ সামলাতে না পেরে স্ত্রী ও সন্তানদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি।’ মাহমুদ হোসেনের মতই অবস্থা অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সৌদি সরকারের নিজ নাগরিকদের কাজের সুযোগ তৈরিতে প্রবাসী হটানোর জন্য কর আরোপের পরিকল্পনা এ ক্ষেত্রে সফল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
No comments:
Post a Comment