সালভাদোর ব্রাজিলের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ২০০৪ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ লক্ষ। উত্তর-পূর্ব ব্রাজিল দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলির একটি এবং এখানে জন্মহার ও নবজাতের মৃত্যুহার দুইটিই অত্যন্ত বেশি। সালভাদোর শহরের অধিকাংশ অধিবাসী অত্যন্ত দরিদ্র এবং বেকারত্ব ও অপরাধের হার খুব বেশি। বর্তমানে শহরটি ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি আফ্রিকান জনবসতি সমৃদ্ধ শহর এবং এখানকার আফ্রো-ব্রাজিলীয় সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রভাবশালী। এখানকার আফ্রো-ব্রাকিলীয় খাবারদাবার, কাপোয়েইরা নামের একটি আফ্রো--ব্রাজিলীয় মার্শাল আর্টের জনপ্রিয়তা, এবং কাঁদোম্ব্লে নামের একটি আফ্রো-ব্রাজিলীয় ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য এই প্রভাব নির্দেশ করছে। কাঁদোম্ব্লে ধর্মের ১০০০-এরও বেশি মন্দির, যেগুলি তেরেইরু নামে পরিচিত, এই শহরে অবস্থিত।
সালভাদর শহরের আয়তন ৩২৪ বর্গ কিমি। শহরের কেন্দ্রীয় অংশ দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত --- সিদাদে বাইজা (নিম্ন শহর) ও সিদাদে আলতা (ঊর্ধ্ব শহর)। দুইটি অংশই ঔপনিবেশিক যুগে গঠিত হয়।
ঊর্ধ্ব শহর নিম্ন শহর থেকে ৭০ মিটার উঁচু একটি জায়গার উপর অবস্থিত। খাড়া ঢালের কারণে দুই অংশের মধ্যে যাতায়াত কষ্টকর। ১৮শ শতকের শেষ দিকে প্রযুক্তির উন্নতি এই সমস্যার সমাধান করে। ১৮৭৩ সালে একটি খাড়া লিফ্ট তৈরি করা হয়। ১৯২৮ সালে আরেকটি ব্যবস্থা স্থাপন করা হয় এবং বর্তমানে এটি দৈনিক ৫০,০০০ যাত্রী বহন করে। সম্প্রতি আলাকা দুইটিকে সংযুক্ত করার জন্য কেবল রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে --- প্লানু ইনিক্লিনাদু গোন্সালভেস এবং প্লানো ইঙ্কলিনাদু কালসাদা।
নিম্ন শহর সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এবং এটি মেট্রোপলিটনটির বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সমুদ্রের তীরে জাহাজের অনেক বাণিজ্যিক ডক ও গুদাম এবং ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি অবস্থিত। পর্যটকদের জন্য মের্কাদু মোদেলু একটি আকর্ষণীয় বিপণী বিতান।
ঊর্ধ্ব শহরে সালভাদোরের ঐতিহাসিক অঞ্চল অবস্থিত। এখানে ঔপনিবেশিক আমলের বহু দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের দেখা মেলে। এদের মধ্যে আছে কারুকাজময় বারোক-ধাঁচের গির্জা। পেলৌরিনিউ, তেরেইরু দে জেসুস এবং আনশিয়েতা এলাকার গির্জাগুলি স্থাপত্যকর্মের জন্য বিখ্যাত। সাউঁ ফ্রান্সিস্কোর গির্জা বিখ্যাত। তেরেইরু দে জেসুস এলাকার আফ্রো-ব্রাজিলীয় জাদুঘরে শহরটির সংস্কৃতিতে ও সাধারণভাবে উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে আফ্রিকানদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
শরটিতে ঔপনিবেশিক আমলের প্রায় ১৫টি দুর্গ রয়েছে। এদের মধ্যে বার্রার সেন্ট অ্যান্টনি দুর্গ সবচেয়ে পুরানো; ১৫৮০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি স্থানীয়ভাবে বার্রার বাতিঘর নামে পরিচিত এবং এতে একটি জলচিত্র জাদুঘর আছে।
এলাকার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে আছে বাইয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৬) এবং সালভাদোরের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১)
সালভাদোর ঔপনিবেশিক আমল থেকেই এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শহর। পর্তুগিজ আমলে এটি ব্রাজিলের প্রধান বন্দর ছিল এবং চিনি, তামাক, ইত্যাদি রপ্তানি করত। আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার ক্রীতদাস এখানে এসে পৌঁছাত। স্থানীয় শিল্পের মধ্যে আছে মাছ ধরা, তেল ও গ্যাস নিষ্কাশন, সিগার তৈরি, তেল পরিশোধন ও পর্যটন। আরাতু উপসাগরের কাছে প্রতিষ্ঠিত সেন্ত্রু ইন্দুস্ত্রিয়াল দে আরাতু নামে শিল্প পার্কে ১০০-রও বেশি শিল্প ফার্মের অবস্থান।
নৈসর্গিক সৌন্দর্য, বেলাভূমি, আফ্রিকান ঐতিহ্য ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের কারণে গত কয়েক দশকে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে বাইয়ার রাজ্য সরকার শহরটির আকর্ষণ বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেন। ফেব্রুয়ারির শেষে কার্নিভালও একটি বড় পর্যটক-আকর্ষণকারী ঘটনা।
শহরের কেন্দ্র থেকে ৩০ কিমি দূরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আয়েরোপোর্তু দইস দে জুলিউ অবস্থিত। শহরটির ব্রাজিলের অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরের বাস-সংযোগ আছে। রেল পরিবহন স্থানীয় এলাকাতেই সীমাবদ্ধ।
সালভাদোর ১৫৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত এটি পর্তুগালের ব্রাজিলীয় উপনিবেশের রাজধানী ছিল। এরপর রিউ দি জানেইরু ব্রাজিলের রাজধানী হয়। ঔপনেবশিক আমলে সালভাদোর প্রধান বন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে। এ সময় শহরটি চিনি ও তামাক রপ্তানি করত, যা শহরটির পাশের উপকূলীয় সমভূমিতে উৎপাদন করা হত।
No comments:
Post a Comment