Social Icons

Thursday, February 1, 2018

ঘুরে আসুন সড়কপথে ঢাকা টু দার্জিলিং, খরচও কম


আপনার অভিলাষী মনের সব ইচ্ছাই পূরণ করবে পাহাড়ের রাজ্য দার্জিলিং। দার্জিলিংয়ের দৃশ্য দেখলে   শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হবে আর তাকিয়ে শুধু ডুবে যেতে মন চাইবে। পাহাড়ের কথোপকথনের শব্দরাশি আর শত-সহস্র অভিমানী পাহাড়ি মুখশ্রীর আলিঙ্গন পাবেন দার্জিলিং জুড়ে। 

ভিসা
প্রথমেই আপনাকে ভারতীয় দূতাবাস হতে ‘By Road Category’-তে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভিসা নিতে হবে।

বাস সিলেকশন
ঢাকার গাবতলী থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু নন এসি (হানিফ, এস আর) এবং এসি ( মানিক এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এস আর পরিবহন) বাস ছেড়ে যায়। নন-এসিতে ভাড়া ৬০০ থেকে ৬৫০-এর মধ্যেই পড়বে। আর এসিতে ভাড়া পড়বে ৮৫০ টাকা।

তবে শ্যামলীর ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা, কেননা তারা শিলিগুড়ি পর্যন্ত টিকেট করে থাকে। 

শুধু সীমান্ত পর্যন্ত তাদের কোনো সার্ভিস নেই, বর্ডার পর্যন্ত শ্যামলী ঠিকই আপনাকে এসিতে করে নিয়ে যাবে, তবে বাংলাদেশ সীমান্তের অপর প্রান্ত (ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা) থেকে ওরা আপনাকে কোন গাড়িতে করে নিয়ে যাবে তার কোনো হদিস নেই। 

কেননা ভারতের প্রবেশদারে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, পুরোটাই দালালদের নিয়ন্ত্রণে। আমাদের কাছ থেকে শ্যামলী পরিবহন জনপ্রতি ১৫০০ টাকা করে এসির ভাড়া নিলেও, তারা আমাদেরকে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত নন-এসিতে যেতে বাধ্য করে।

এই সমস্যাগুলো এড়াতে আপনি শুধু সীমান্ত পর্যন্ত এসি বাসে করে যান। যেহেতু প্রায় ১০-১২ ঘণ্টার জার্নি, তাই উপদেশ থাকবে নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য (গরমকালে) এসি বাস সিলেকশন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

যাত্রা
বেশির ভাগ গাড়ি রাত ৮টায় ঢাকা থেকে বুড়িমারীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং সকাল ৬-৭টার মধ্যেই বুড়িমারী সীমান্তে আপনাকে পৌঁছে দেবে। সীমান্তে পৌঁছে যাওয়ার পর সকালের নাশতা বাংলাদেশেই সেরে ফেলুন, তারপর দুই দেশের ইমিগ্রেশন (বাংলাদেশ ও ভারতের) পাড়ি দিন। আপনি যখন চ্যাংড়াবান্ধায় পৌঁছে যাবেন, কালক্ষেপণ না করে শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া জিপগুলোতে চেপে বসুন। কেননা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে বিকেল নাগাদ আপনাকে অবশ্যই দার্জিলিং পৌঁছাতেই হবে।

সদস্যসংখ্যা বেশি হলে একটি জিপ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। ১৫০০ রুপির মধ্যে অথবা জনপ্রতি ২৫০ রুপির মধ্যে শেয়ারিং-এর মাধ্যমে জিপে চড়ে বসতে পারেন। শিলিগুড়ি পৌঁছাতে আপনার তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে, সব ঠিক থাকলে দুপুর ১টার মধ্যেই শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবেন।

সেখানে ১২০ রুপির মধ্যে পেটপুরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন (দেরি হয়ে গেলে দুপুরের খাবার খাওয়ার দরকার নেই) এবং দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে একটি ভারতীয় মোবাইল সিম কিনে নিন। পাওয়ার রিচার্জের মাধ্যমে বাংলাদেশে দুই রুপি/মিনিটে কথা বলা যায়। সেই সঙ্গে ডাটা প্যাকও সহজেই অ্যাকটিভ করে নিতে পারেন) তারপর সরাসরি দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে জিপে চেপে বসুন জনপ্রতি ২০০ রুপির মধ্যেই অথবা ১২০০/১৫০০ টাকার মধ্যেই জিপ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মধ্যেই আপনাকে পাহাড়ঘেরা রাজ্য দার্জিলিংয়ে পৌঁছে দেবে।

হোটেল বুকিং
১০০০ থেকে ১২০০ রুপির মধ্যেই আপনি খুব ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন। (ওয়াইফাই এবং গরম পানির ব্যবস্থাসহ)। হোটেল পার্কলেন (০০৯১৯৪৩৪১৬৬৯৫৪, ০০৯১৮৯০৬৩৪৮৮৩৬) বেশ ভালো হোটেল। মনে রাখবেন দার্জিলিংয়ে রাত ৮টার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং হোটেল বুকিং এবং রাতের খাওয়া ৮টার মধ্যেই শেষ করতে হবে।

কোথায় ঘুরবেন

প্রথম দিন
রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠে টাইগার হিলের উদ্দেশে রওনা দিন। সূর্যোদয়ের হাসির চিকিমিকি দেখতে পাবেন হিমালয়ের বরফ ছুঁয়ে। তারপর, সারাদিন বাতাসিয়া লুপ, রক গার্ডেন ঘুম স্টেশন, চিড়িয়াখানা (বেশ সুন্দর), টি গার্ডেন, মল রোড ঘুরতে থাকুন। দার্জিলিংয়ে বেশ কিছু মসজিদ রয়েছে, বড় দুটি মসজিদ অবশ্যই দেখার চেষ্টা করবেন।


দ্বিতীয় দিন
কাঞ্চন জং এর উদ্দেশে রওনা দিন, দার্জিলিং শহর থেকে খানিকটা দূরে আরেকটা শহর, যেখানে প্যারাগ্লাইডিং করা যায়। আর হিমালয়ের একটা পাশ দেখা যায়।

তৃতীয় দিন
আপনি চাইলে পাহাড় আর লেকে ঘেরা ছোট্ট শহর মিরিক ঘুরে আসতে পারেন। 

আবার চাইলে দার্জিলিং থেকেও মিরিক ঘুরে আসতে পারেন। অথবা মিরিকেও থাকতে পারেন।

যেহেতু মিরিক থেকে শিলিগুড়ি কাছাকাছি, তাই আপনার মিরিকে থাকাটাই ভালো। মিরিকে অল্প ভাড়ায় (০০৯১৯৫৬৩৪৫৭৭৯৯) wooden Restaurant-এ থাকতে পারেন।

মিরিকে ঘোরার জন্য লেক আর মোটেলের টপভিউ টাই অসাধারণ। সুতরাং একদিনের বেশি অবস্থান করার প্রশ্নই ওঠে না।

চতুর্থ দিন
সকাল সকাল শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা দিন। মিরিক থেকে শিলিগুড়ি আসতে মাত্র দুই ঘণ্টা লাগে আর শিলিগুড়ি থেকে সীমান্তে আসতে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। গাড়ি বুকিং করার জন্য সোইলাজ দা’র (০০৯১৯৭৩৪৯৯৭৯০২) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ভালো মানুষ তিনি। মনে রাখবেন, সন্ধ্যা ৬টার পর সীমান্তের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

ইমিগ্রেশন কীভাবে পাড়ি দেবেন

যাওয়ার সময়
বাংলাদেশ প্রান্তে ১০০ টাকার বিনিময়ে আর ভারত প্রান্তেও ১০০ টাকার বিনিময়ে কিছু দালাল ইমিগ্রেশনে সহায়তা করে থাকে। তবে দালালদের কাছে পাসপোর্ট দেওয়ার পর তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। অথবা চাইলে আপনি একাই ইমিগ্রেশন পাড়ি দিতে পারবেন।

মনে রাখবেন সঙ্গে কোনো রুপি দেবেন না (থাকলেও বলবেন না) কিছু ডলার সঙ্গে রাখুন আর বাংলা টাকা যতই থাকুক চার-পাঁচ হাজারের বেশি আছে বলে স্বীকার করবেন না।

ফিরে আসার সময়
ইমিগ্রেশনের দুই প্রান্তেই (ভারত-বাংলাদেশ) আপনাকে জিজ্ঞেস করবে কী কী কিনেছেন? আপনি বলবেন পরিবারের জন্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। কত টাকার শপিং করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবেন। আর বললেও চার-পাঁচ হাজার টাকার বেশি বলবেন না। এ ছাড়া ফিরে আসার সময়ও কিছু দালাল ১৫০ রুপির বিনিময়ে সহায়তা করে থাকে।

তবে কেনাকাটা করার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যেন, একই জিনিস ৪-এর বেশি কেনা না হয় এবং ব্যাগে নতুন ও পুরোনো পণ্য মিলিয়ে রাখুন। এ ছাড়া যাওয়ার সময় পণ্য যতটা সম্ভব কম বহন করুন।

মুদ্রাবিনিময়
বাংলা টাকা চ্যাংড়াবান্ধাতেই রুপিতে পরিবর্তন করে নিন, কেননা দার্জিলিংয়ে রেট খুবই কম পাবেন।

কেনাকাটা কোথায় করবেন
দার্জিলিং থেকে শীতের জামা কাপড় কেনা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শীতের শহর থেকে (মল রোড) আপনি যথাযথ মূল্যেই শীতের পোশাক কিনতে পারবেন। এ ছাড়া কিছু সতেজ চায়ের প্যাকেট কিনে নিয়ে আসতে পারেন। অন্যন্য কেনাকাটা আপনি শিলিগুড়িতে করলেই ভালো হবে।

কোথায় খাবেন
দার্জিলিংয়ে খাওয়ার জন্য সিমলা (০০৯১৯২৩৩৮২৭০৩০) রেস্টুরেন্ট অসাধারণ। মুসলিম হোটেলে খাওয়ার জন্য বড় মসজিদের সামনে যেতে পারেন।

কখন যাবেন
বৃষ্টির সময়টাতে দার্জিলিং যাওয়াটা বোকামি, সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি সেরা সময় দার্জিলিং উপভোগ করার জন্য।

খরচ
ঢাকা টু বুড়িমারী (৮৫০ টাকা)+সীমান্ত ঘুষ (১৫০ টাকা)+ চ্যাংড়াবান্ধা টু শিলিগুড়ি (২০০/২৫০ টাকা)+শিলিগুড়ি টু দার্জিলিং ২০০ টাকা= ১৫০০/১৭০০ টাকা।
হোটেল খরচ ৫০০ টাকা (প্রতিজন/প্রতিদিন)
খাওয়া খরচ ৫০০ টাকা (প্রতিজন/প্রতিদিন)
সারা দিনের জন্য জিপ ভাড়া করলে ২২০০/২৫০০ টাকা প্রয়োজন হবে।

এটা অফ সিজন রেট, সিজনের সময় ৩০ শতাংশ বেশি খরচ হবে। সুতরাং হিসাবটা সেভাবেই করে নেবেন।

যা করবেন না
১। দার্জিলিং পরিচ্ছন্ন শহর, দয়া করে নোংরা করবেন না।
২। দার্জিলিংয়ে উন্মুক্ত ধূমপান করা দণ্ডনীয় অপরাধ, সুতরাং ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।


No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates