সংসারের অভাব দূর করতে চড়া সুদে লোন নিয়ে প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় না মেনে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এসব প্রবাসীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারলেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বছরের বছর সময় লেগে যাচ্ছে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ১০ লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে গেছে। মোট অভিবাসন ব্যয় ছিল ৪৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে বিদেশে গেলে এই ব্যয় হতো ১৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ গত বছর ছয়টি দেশে ৯ লাখের বেশি শ্রমিক রপ্তানিতে ২৯ হাজার ৭২ কোটি টাকা বেশি অভিবাসন ব্যয় যোগ হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন স্বপন উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ১১০০ থেকে ১২০০ রিক্রুটিং এজেন্সি ও এক লাখের বেশি সাব-এজেন্ট রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে ছয়টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে গিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি, সাব-এজেন্ট ও দালালরা বিদেশে যাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করেছে আনুমানিক প্রায় ৪৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। সরকারের নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ১৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। অতিরিক্ত ২৯ হাজার ৭২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় রিক্রুটিং এজেন্ট, সাব-এজেন্ট, দালালসহ মধ্যস্বত্বভোগীরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী গেছে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন। এসব কর্মীপ্রতি সরকারের নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুই লাখ ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুই লাখ ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা নিলেও মাঠপর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
একইভাবে ওমানে ৮৯ হাজার ৭৪ জন কর্মী গেছে ২০১৭ সালে মাথাপিছু তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে। মোট অভিবাসন ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সরকারের নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে গেলে খরচ হওয়ার কথা ৮৯৭ কোটি টাকা। ওমানে সরকার অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে এক লাখ ৭৮০ টাকা। অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে প্রায় এক হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বেশি আদায় করেছে এজেন্সি, দালাল ও সাব-এজেন্টরা।
গত বছর কাতারে কর্মী গেছে ৮২ হাজার ১২ জন। সরকারিভাবে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৭৮০ টাকা। নেওয়া হচ্ছে প্রায় তিন গুণ বেশি টাকা। সরকারের নির্ধারিত টাকায় কর্মী পাঠালে খরচ হতো ৮২৬ কোটি টাকা। কুয়েতে এক লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা সরকারিভাবে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা করে। এভাবে ২০১৭ সালে কুয়েতে পাঠানো ৪৯ হাজার ৬০৪ জন কর্মীর কাছ থেকে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা হারে প্রায় দুই হাজার ৪৮০ কোটি টাকা আদায় করে নেওয়া হয়।
সরকারি হিসাবে ৫২৯ কোটি টাকায় ওই সব কর্মীকে কুয়েতে পাঠানোর কথা থাকলেও এক হাজার ৯৫১ কোটি টাকা অতিরিক্ত হিসেবে আদায় করে নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। আর সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় না থাকায় রিক্রুটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টরা ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। গত বছর ৪০ হাজার ৪০১ জন কর্মী গেছে সিঙ্গাপুরে। এসব কর্মীর কাছ থেকে আনুমানিক প্রায় দুই হাজার ৪২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টরা। বেশি অর্থ খরচ করে বিদেশে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই কাজও খুঁজে পাচ্ছে না। পেলেও তা এত কম যে অভিবাসন ব্যয় ওঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment