দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও মাদক সরবরাহ ও বেচাকেনা থামছে না। বরং কোনো কোনো এলাকায় অভিযানের অজুহাতে মাদকের দাম বেড়েছে। খোদ রাজধানীর বিভিন্ন স্পটগুলো এখনো মাদকে সয়লাব হয়ে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঝামেলা এড়াতে মাদক কারবারিরা কৌশল পরিবর্তন করছে। এরা বিচ্ছিন্নভাবে কঠোর গোপনীয়তায় মোবাইলের মাধ্যমে মাদক কেনাবেচা করছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে এরই মধ্যে প্রায় এক শ’ নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে চার হাজারের মতো। কিন্তু মাদক কারবার এখনো বন্ধ হয়নি। রাজধানীর প্রায় সব থানা এলাকায় কয়েক শ’ মাদকের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকার লালবাগের শহীদনগর, শ্মশানঘাট, কিল্লার মোড় টেম্পো স্ট্যান্ড, চকবাজারের ইসলামবাগ, কামালবাগ, আলীরঘাট বেড়িবাঁধ বাগানবাড়ি, কোতোয়ালির ওয়াইজঘাট, বাবুবাজার ব্রিজের নিচে পরিবহন স্ট্যান্ড, বাদামতলী, কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর রনি মার্কেটসংলগ্ন মাদক সম্রাজ্ঞী বিউটির বাড়ি, ৫ নম্বর গলির ফরমা কালুর বাড়ি, দক্ষিণ রসুলপুর মাদক সম্রাজ্ঞী সুরাইয়ার মাদক স্পট, ৮ নম্বর গলির ৩টি গ্যারেজে সিরাজ তালুদারের মাদকের হাট, বড়গ্রাম ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে, আলীনগর, রূপনগর, কুড়ারঘাট মেডিক্যাল চত্বর, পূর্ব রসুলপুর ১ নম্বর গলির দক্ষিণে, ৫ ও ৬ নম্বর গলির উত্তরে কুখ্যাত মাদক বিক্রেতা রানা, বিল্লাল, শাকিলসহ ৫-৬ জন, কোম্পানীঘাট ট্যানারি পুকুরপাড়, ঝাউচর, ঝাউলাহাটি, হাসাননগর, ব্যাটারিঘাট, নুরার গাড়া, চাঁদ মসজিদ রোড, মুন্সিহাটি, আচারওয়ালা ঘাট, লোহারপুল, কয়লাঘাট, মুসলিমবাগ ঠোঁটা, বুড়িগঙ্গা পাঠাগারসহ অন্তত ৫০টি মাদক স্পটে প্রতিদিনই অবাধে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হয়। এসব মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করেন পারভেজ হোসেন বিপ্লব, শাকিল, জাবেদুল ইসলাম জাবেদ ওরফে সমিতি জাবেদ, মজিদ, মুসা, জসিম, মাউচ্ছা দেলু, ফেরদৌস মোল্লাসহ আরো অনেকে। জেনেভা ক্যাম্প থেকে এক অভিযানে ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার চিহ্নিহ্নত মাদক ব্যবসায়ী মো: ইমতিয়াজ, পঁচিশ নাদিম দম্পতি, পাচু, তানভীর, পাপিয়া ও শামীমের স্ত্রী রানী গ্রেফতার হয়নি। তারা মাদক বিক্রি করেই যাচ্ছে। নারী মাদক কারবারি গ্রুপের প্রধান শাহিনা আক্তার সাথী। তার গ্রুপে রয়েছে মোহাম্মদ পুল কসাইয়ের স্ত্রী সিমা, সুলতানের স্ত্রী নার্গিস, আসগরের স্ত্রী সয়রা, আলী নেওয়াজের স্ত্রী গান্নী, মৃত মনির বেগের মেয়ে কালী রানী, জামিলের স্ত্রী বেচনী, মোস্তাকিমের স্ত্রী সকিনা, মৃত সাকিলের স্ত্রী কুলসুম ও মহিউদ্দিনের মেয়ে রেশমা। গাঁজা বিক্রির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে শামীমের স্ত্রী রানী ও মুন্না। তরুণ গ্রুপের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ পুল কসাইয়ের ছেলে ফরিদ, আরিফ, আসিফ, আলী নেওয়াজের ছেলে সাগর ও সালমান, মৃত মনির বেগের ছেলে মুন্না। বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে পাখি, আসলাম, টেরু সেলিম বাবা, ছোট আরশাদ, মাসসা রাজু, সামসের, নাঈম, আরমান ও ছে মুণ্ডী; পাচু গ্রুপের পাচু, পাপিয়া, রাহি, জুম্মান, নুরা, ঢাকাইয়া নাদিম, নাসির, কালু, তেলী জাহিদ, সনু, টিপু তাহেরী; রাজিয়া গ্রুপের রাজিয়া ইভা, ফয়সল, কুরবান, ইমরান, মোন, ফরিদা, ছোট সাকিল, নবাব, ওয়াসিম, রানী, কুরবান, অপু, টিপু, মানিয়া, রানা, জাহিদ, জাবেদ ও বারেক। নিয়ন্ত্রক বা শেল্টার গ্রুপে আছে এস কে গোলাম রাব্বানী, সামদানী, নাসিম, মামুন, পটল মাহমুদ, শান্তি গ্রুপের শানু, আনোয়ার, রসুল, আজম, আন্ডে আলমগীর, নাঈম, আফতাব, নওশাদ, ইমরান, চুয়া ওরফে চোরা সেলিম, হানিফসহ চার শতাধিক মাদক বিক্রেতা। সূত্র জানায়, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, তুরাগ, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সবুজবাগ, কমলাপুর, কদমতলী, গাবতলী, কাওরানবাজার, তেজগাঁও, মহাখালীর সাততলা বস্তি, শাহবাগ, বুয়েট চত্বর, ঢাবির চারুকলা, টিএসসি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবাজার, চাঁনখারপুল, আনন্দবাজার, ফুলার রোড, ঢাকেশ্বরী মন্দির, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মতিঝিল, শাহ আলী, শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, গেন্ডারিয়াসহ গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড, নিমতলী, এরশাদনগরসহ বিভিন্ন মাদক স্পটে এখনো ইয়াবার বড় বড় চালান ঢুকছে।
এ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিদিনই অভিযান চলছে। স্পট ও তালিকা ধরে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। আশা করা যায় কেউ গ্রেফতার এড়াতে পারবে না।