ইতালির মিলানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত প্রবাসী বাংলাদেশি শামছুল হক স্বপনের লাশ দেশে এসেছে রবিবার (২৭ মে)। সকালে তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে মিলানোর মালপেনছা বিমানবন্দর থেকে তাঁর লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে আসা হয় নবাবগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে। গ্রামে শামসুল হকের লাশ নিয়ে যাওয়ার পর শোকের ছায়া নেমে সেখানে। নিহত স্বপনতে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায় তাঁর বাড়িতে।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালী গ্রামের যুবক শামসুল হক একজন ইতালি প্রবাসী। গ্রামের সৎ ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত স্বপনকে একনজর দেখতে শত শত মানুষ বাড়িতে জড়ো হয়। এসময় ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সালমা বেগম ও বাবা আব্দুস সালাম। আর মৃত্যুর খবরের পর থেকে অসুস্থ স্ত্রী আইভি আক্তার কফিনে মোড়ানো স্বামীর লাশ দেখেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে স্বপনের মা সালমা বেগম বলেন, ‘গত মাসের ২৬ তারিখে আমার বাবাটার সাথে কথা হইল। বৃষ্টির কারণে কথা বুঝতাছিলাম না। আমার বাবা কইলো, মা কাইল সকালে ফোন দিমু। সকাল বিকাল সন্ধ্যা, এরপর কতদিন কাইটা গেল আমার বাবা তো আর ফোন দিলো না। আমার এহনো মনে হয় এই বুঝি আমার বাবাডা ফোন দিব। ও এভাবে চইলা যাইতে পারে না। তোমরা আমার সোনাটারে আইনা দেও।’
স্বপনের বাবা আব্দুল সালাম জানান, পাঁচ ছেলের মধ্যে স্বপনই সবার বড়। সে পরিবারের হাল ধরায় এখনো পুরোপুরি ধার-দেনা শোধ করে উঠতে পারেনি। তারপরও একপাশ থেকে আগলে রেখে ছোট ভাইদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করে আসছিলো। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার আগেই এই দূর্ঘটনায় আমাদের সর্বশান্ত করে দিলো।
প্রতিবেশিরা জানান, ২০০৫ সালে এইচএসসি শেষে ঢাকার তেজগাঁও কলেজ পড়ালেখা শুরু করেন স্বপন। পরিবারের কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালে প্রথমে ইংল্যান্ড, পরে ইতালিতে প্রত্যাবর্তন করে রেস্টুরেন্টে কাজ করছিলেন। স্থানীভাবে অত্যন্ত স্বজ্জন, মিশুক, পরোপকারী যুবক হিসেবে পরিচিতি ছিলো তাঁর। বছরখানেক হয়েছে বিয়ে করেছে স্বপন। হাতের মেহেদির রং না শুকাতেই স্বামীর এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না স্ত্রী আইভি। রোববার লাশ দেখার পর থেকেই বাকরুদ্ধ তিনি।
বেলা সাড়ে ১২টায় নিহতের কফিনে মোড়ানো মরদেহ বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায় শামসুল হক স্বপনের লাশ। জোহরের নামাযের পর নিজ বসতভিটায় জানাযা শেষে চিরদিনের জন্য শায়িত করা হয় স্বপনকে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল (শুক্রবার) ইতালির বাণিজ্যিক নগরী মিলান সেন্ট্রাল স্টেশন সংলগ্ন সেত্তেমবিরিনি নামক রাস্তায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবক শামসুল হক স্বপন নিহত হন। দীর্ঘ এক মাস পর তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মিলানোর মালপেনছা বিমানবন্দরে থেকে তার লাশ রোববার (২৭ মে) সকালে বাংলাদেশ বিমান বন্দরে এসে পৌছায়।
No comments:
Post a Comment