Social Icons

Thursday, May 24, 2018

আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের খপ্পরে ইউরোপগামী বাংলাদেশিরা

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিনিয়ত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশিরা পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে। রঙিন স্বপ্নে বিভোর হওয়া এসব  অভিবাসন প্রত্যাসীদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশিদের ইউরোপ যাওয়ার প্রবল আকাংখাকে কাজে লাগিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক পাচারচক্র। আর এসব পাচারচক্রের যোগানদাতা হিসেবে জড়িয়ে পড়েছেন বাংলাদেশিরাও। যারা বাংলাদেশ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন, তাঁদেরকে প্ররোচনা দিয়ে ইউরোপে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের লোভ আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে এমন দু-একটি চক্রকে আটক করেছে দেশি-বিদেশি আইন-শৃংখলাবাহিনী।
২০১৬ সালের ২৫মে ইউরোপে যাওয়ার ভুয়া কাগজ তৈরির দু’টি চক্রের ১৯ জনকে গ্রিস ও চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেপ্তার করেছে ইউরোপীয় পুলিশ সংস্থা (ইউরোপোল)৷ আটকের পর ইউরোপোল জানায়, গ্রিসের এথেন্সভিত্তিক এই দু’টি চক্র জাল ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট তৈরির সংগে জড়িত, যার একটি বাংলাদেশিরা চালায়। ইইউ-র জাল পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে প্রতিটি ৩ হাজার ৬০০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করে তারা। বাংলাদেশ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব জাল কাগজপত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশিদের চক্রটি ২০১৫ সালে এসব কাগজপত্রের অন্তত ১২৬ টি চালান কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। জালিয়াতের সংগে জড়িত অন্য চক্রটি সুদানিদের এবং গত বছর তারা কুরিয়ারে পাঠিয়েছে প্রায় ৪৩১টি চালান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এথেন্সভিত্তিক এই দু’টি জালিয়াত চক্র পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, সেনজেন ভিসা (ইউরোপের ২৬টি দেশে অবাধে চলাচলের অনুমতিপত্র), ড্রাইভিং লাইসেন্স, শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রেসিডেন্স পারমিট জাল করে। এবং সেগুলো খুব সুচারুভাবে পাচারকারীদের কাছে সরবরাহ করে।
আন্তর্জাতিক পাচারকারী দু’ একটি সংস্থাকে ইউরোপোল আটক করার পাশাপাশি এই চক্রকে ধরতে বাংলাদেশে আইন শৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল জাল ভিসা চক্রের চার সদস্যকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে সেনজেনভুক্ত দেশ উত্তর সাইপ্রাসে যাওয়ার জাল আমন্ত্রণপত্র, ১৪টি জাল ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট, ভিসা তৈরির সরঞ্জাম ও বিপুল পরিমাণ বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী সেনজেন ভিসার উপর কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে জাল সেনজেন ভিসা তৈরি করে প্রিন্ট দেয় এই চক্রটি। তারা বিভিন্নভাবে সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর অফার দেয়৷ এ জন্য তারা অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংগে তিন থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করেন।
তবে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র ও বাংলাদেশে আটক পাচারকারীদের সংগে কতটুকু যোগসাজোগ আছে তা সুচারুভাবে বিশ্লেষণ না করা গেলেও, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন সংস্থা এবং অভিবাসনের নিত্যচিত্র বিশ্লেষণ করলে এমন ফলাফলই ফুটে উঠে।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট গত বছরের মে মাসে ইউরোপে মানবপাচারের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তারা বলেছে, সাগরপথে ইউরোপে বেশি মানুষ পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পরিসংখ্যান দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ‘২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে লিবিয়া থেকে অন্তত ২ হাজার ৮৩১ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে যায়। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিলো মাত্র একজন। আর ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশের ৯ হাজার ৯১৫ জন নাগরিককে উদ্ধারের বিষয়টি ইটালি সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে৷’
বাংলাদেশ থেকে ই্উরোপে মানবপাচারে বাংলাদেশি চক্রের সংশ্লিষ্টতার কথা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিচার্স মুভমেন্ট ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলোতে মানবপাচারে জড়িত আর্ন্তজাতিক চক্রগুলো সক্রিয়। কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমরা কোনো তথ্য বা ব্যবস্থা নেয়ার মতো খবর পাচ্ছি না। এরা কিন্তু বাংলাদেশের নয়। এরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের৷ যারা ঐ চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হন, তারা প্রলোভনের ফাঁদে পড়েন। এসব দেশের উন্নত জীবন সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্যও রয়েছে। এর বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু বাংলাদেশি আছেন, যারা বেশ ধনী। সেখানেও চক্র গড়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‌‌‌আমাদের দেশে যে চক্রগুলো আছে তারা আন্তর্জাতিক চক্রের লোকাল এজেন্ট। আমার কথা হলো, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা প্রতারিত হয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় আরো অনেক দেশে ফেরত যাচ্ছেন, তাদের টেস্টিমনির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চক্রকে চিহ্নিত করা ও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates