গত ২১ মে আমেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যকার নদী রিও গ্র্যান্ডে ডুবে বাংলাদেশি দুই তরুণ মাইনুল হাসান হৃদয় ও শাহাদাত হোসেন নাইম মারা যান। সম্প্রতি তাঁদের মৃতদেহ দেশে পাঠানো নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। মাইনুলের পরিবার দ্রুত তাঁর মৃতদেহ দেশে ফেরত আনতে চাইলেও, তাঁর মায়ের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন ছাড়া মৃতদেহ হস্তান্তর করতে রাজি হচ্ছে না আমেরিকার সীমান্ত পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, শাহাদাতের মৃতদেহের সংগে মেক্সিকো পুলিশের কাছে থাকা আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়ায় মৃতদেহ হস্তান্তর করতে রাজি আছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শাহাদাতের পরিবার মৃতদেহ ফেরত নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, মাইনুল ও শাহাদাতের সংগে আরো দুই বাংলাদেশি ছিলো বলে জানা যায়। তাঁরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পুলিশ কেন্দ্রে আটক রয়েছে।
আমেরিকায় কর্মরত বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী শাহিন আলম বলছেন, মাইনুল ও শাহাদাত মূলতঃ দালালচক্রের মাধ্যমে আমেরিকায় আসার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। এই চক্র ইতিমধ্যে আরও অনেক পরিবারের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে। কিন্তু দুই তরুণের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে বলে তারা মাইনুল ও শাহাদাতের পরিবারকে বোঝাচ্ছে, তাঁদের সন্তান বেঁচে আছে। তিনি আরো জানান, দালালদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত শাহাদাতের পরিবার। মৃত ব্যক্তি তাঁদের সন্তান কিনা এই বিষয়ে এখনো তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না।
মৃতদেহ দেশে পাঠানোর বিষয়ে মাইনুল হাসানের খালাতো ভাই বোরহান উদ্দীন জানান, ‘আমরা মৃতদেহ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু মৃতদেহ ভেসে যাওয়ার সময় তাঁর সংগে কাগজপত্র ছিলো না, শুধু ছবি ছিলো, সেই ছবি দেখেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সে আমাদের সন্তান। কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ আরো নিশ্চিত না হয়ে মৃতদেহ হস্তান্তর করছে না। তিনি আরো জানান, আমরা মানবাধিকার সংস্থা ড্রাম-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ডিএনএ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। সেটা হলেই মৃতদেহ ফেরত পাওয়া যাবে।
তবে মাইনুল হাসানের পরিবারের ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে শাহাদাতের পরিবারে। দালালের মাধ্যমে ৩০ লাখের বেশি টাকা খরচ করে সন্তান স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি দিতে গিয়ে লাশ হয়েছে, সেটা মানতে চাচ্ছে না তাঁর পরিবার। অভিবাসন অধিকার কর্মী মাহিন হাসান বলেন, নাঈমের পরিবারকে মৃতদেহের ছবি ও তাঁর পরনের জামা-কাপড় দেখানো হয়েছে। কিন্তু পরিবার জানিয়েছে, এ জামা-কাপড় শাহাদতের নয়।
এদিকে সীমান্ত পুলিশের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শাহাদাতের মৃতদেহ পচে গলে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দেখে শনাক্ত করার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু তাঁর শরীর থেকে উদ্ধার করা ছবি এবং মেক্সিকো পুলিশের কাছে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, স্বাক্ষর, পাসপোর্টের কপিতে উল্লেখ করা তথ্যের সংগে তাঁর পরিবারের দেওয়া তথ্যের মিল রয়েছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সুতরাং নাইমের মৃতদেহ হস্তান্তরে বাধা নেই কর্তৃপক্ষের। কিন্তু পরিবার কোনো প্রকার সহযোগিতা করছে না মৃতদেহ হস্তান্তরে।
মাহিন হাসান বলেন, শাহাদাতের মৃতদেহ সময়মতো পরিবার গ্রহণ না করলে নিয়ম অনুযায়ী রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে মৃতদেহটি গলিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে শাহাদাতের পরিবারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment