স্বপ্নের বীজ রোপণ করতে হয় শৈশবেই। কৈশোরে তা অঙ্কুরিত হয়। তারুণ্যে রূপ নেয় চারা গাছের। যৌবনে মহীরুহ। আজকের নেইমার কিংবা পল পগবার বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ছেলেবেলায়। যখন তারা স্কুলের আঙ্গিনাতেই পা রাখেননি। আধো আধো উচ্চারণে কথা বলতেন। ছেলেবেলার সেই স্বপ্নটাই লালন করেছেন এতদিন। বিশ্বকাপ খেলার। বিশ্বকাপ জেতার। নেইমার, জেসুস, পগবা, লুকা মডরিচ, হ্যারি কেইনরা শৈশবের সেই বিশ্বকাপ স্মৃতিই বর্ণনা করলেন ফিফা ডট কমের কাছে।
নেইমার তখন সবে হাঁটতে শিখেছেন। মুখে ফুটছে এক আধটা কথাও। ব্রাজিলে হাঁটতে শেখা মানেই ফুটবল নিয়ে খেলা করা। নেইমারও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে রোমারিও আর বেবেতোর খেলতে দেখেছিলেন তিনি। নেইমার বলেন, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে আমার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ সালে। আমি তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তবে আমার খুব মনে পড়ে, হল্যান্ডের (নেদারল্যান্ডস) বিরুদ্ধে রোমারিওকে গোল করতে দেখেছিলাম টিভিতে। আমার মনে আছে বেবেতোর ক্রস। এটা ছিল গোলাজো।’ রোমারিও আর বেবেতোদের খেলতে দেখেই নেইমারের শিশু মনে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন জেগেছিল। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন জেগেছিল। সেই স্বপ্ন আজও মনের গভীরে যত্ন করে রেখেছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারের স্বপ্ন পূরণ হবে কি! ফ্রান্স দলের অন্যতম তারকা পল পগবা। ফরোয়ার্ড লাইনে তিনি জুটি বাঁধবেন আঁতোয়ান গ্রিজমান এবং কিলিয়ান এমবাপ্পেদের সঙ্গে। পগবার ছেলেবেলার স্মৃতিতেও ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের দৃশ্য। পগবা বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের দৃশ্যটা। তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। সম্ভবত ৬ কিংবা ৭ বছরের। বাড়িতে বসে অন্যদের সঙ্গে ম্যাচটা দেখছিলাম। ফ্রান্স ম্যাচটা জিতে যাওয়ার পর আমরা রাস্তায় বেরিয়ে আসি। সেখানে বাজনা বাজছিল আর আমরা সবাই খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম।’ আরও একবার ফরাসিদের এমন আনন্দে ভাসানোর উদ্দেশ্যেই রাশিয়া যাত্রা করবেন পগবারা।
হ্যারি কেইন ২০০২ বিশ্বকাপের সময় ছিলেন আট বছরের বালক। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় ইংল্যান্ড। কেইনের স্মৃতির পাতায় এখনো জ্বলজ্বল করছে ইংল্যান্ডের সেই পরাজয়। ২৪ বছর বয়সী ইংলিশ ফুটবলার কেইন বলেন, ‘আমার ২০০২ বিশ্বকাপের কথা মনে আছে। রোনালদিনহোর সেই ফ্রি কিক গোলটা ভুলতে পারি না। এটা এখনো আমাকে ব্যথিত করে। এটাই আমার প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি। এরপর থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে খেলা।’ রাশিয়ায় ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হিসেবে খেলতে যাচ্ছেন হ্যারি কেইন। এবারেও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সামনে পড়ার সম্ভাবনা আছে ইংল্যান্ডের। কেইন কী প্রতিশোধটা নিতে পারবেন এবার! ২০০২ সালের পরাজয়ের! গ্যাব্রিয়ের জেসুস গত বিশ্বকাপের সময় ছিলেন ১৭ বছরের তরুণ। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপটা উদযাপন করেছিলেন একজন দর্শক হিসেবে। এর আগেও দুটি বিশ্বকাপে মজা করেছেন তিনি। জেসুস বলেন, ‘গত তিনটি বিশ্বকাপে আমার দায়িত্ব ছিল, আমাদের এলাকার রাস্তায় রঙ করা। আমাদের এখানে বিশ্বকাপটা এভাবেই উদযাপন করা হয়। এটা একটা গুরুদায়িত্ব ধরা হয়। আশা করি এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাব। ফুটবল আমাকে যে আনন্দ উপহার দিয়েছে, তার কিছুটা শোধ দিতে পারব এবার।’ লুকা মডরিচ ১৩ বছরের বালক তখন। ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপ খেলতে গেল ফ্রান্সে। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ক্রোটরা পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। ফ্রান্সের কাছে হেরে ফাইনাল খেলা হয়নি তাদের। তবে বিশ্ব জেনেছি ক্রোটদের সম্পর্কে। লুকা মডরিচ বলেন, ‘আমি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সময় আমি ছিল ১৩ বছরের। বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেলা দেখতাম। ক্রোয়েশিয়ার প্রতিটা জয়ের পরই আমরা উচ্ছ্বসিত হতাম। সারা বিশ্ব সে সময় ক্রোয়েশিয়াকে জানছিল। আমার মনে আছে, সে সময়ই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি একদিন বিশ্বকাপ খেলব।’
No comments:
Post a Comment