Social Icons

Saturday, May 12, 2018

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে বাংলাদেশের লাভ কী

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এখন পৃথিবীর কক্ষপথে। ১১ মে শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে মহাকাশে উড়ে যায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এর মধ্যে দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো স্যাটেলাইটের গর্বিত মালিক হবার এলিট ক্লাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। একইসংগে আলোচনায় আসছে, মহাকাশে এই স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বাংলাদেশের সত্যিকার অর্জন কী হবে? এর লাভ-ক্ষতির পরিসংখ্যানই বা কেমন হবে? এটি কি নিছকই গর্বের প্রতীক হয়ে থাকবে? নাকি বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির মুকুটে বঙ্গবন্ধু-১ও জুড়ে দেবে নতুন নতুন সাফল্যের পালক?তারই চুলচেরা বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হলো এই প্রতিবেদনে:
প্রথমেই প্রশ্ন উঠছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে বাণিজ্যিকভাবে কতোটা লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের? কীভাবে এবং কতোভাবে কাজে লাগানো যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-কে? এসব প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর ২০টি নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকি ২০টি বিক্রি/ভাড়ার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ব্যয় সাশ্রয় দু’টিই হবে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে দুর্বার গতিতে। দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নির্ভর করবে যথাযথ ব্যবসায়িক কৌশলের ওপর। স্যাটেলাইটটি কার্যক্রম শুরু করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা যাবে, তার আর্থিক মূল্যায়ন অংকের হিসাবে করা সমীচীন হবে না বলেও মনে করেন তাঁরা। কী কী কাজ করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দিয়ে: তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক নিবন্ধে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মূলতঃ তিন ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। এগুলো হলো- সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ এবং ডাটা কমিউনিকেশন। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে টিভি চ্যানেল আছে প্রায় ৪৫টি। টেলিভিশনের সম্প্রচারের কাজ করতে পারবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এছাড়াও দেশে ইন্টারনেট সেবা-দানকারী প্রতিষ্ঠান বা আইএসপি আছে কয়েকশ’। বঙ্গব্ন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে এরাও সরাসরি সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি ও কমিউনিটি রেডিও রয়েছে প্রায় পঞ্চাশটির অধিক। রেডিও সম্প্রচারেও ব্যবহৃত হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এছাড়া স্যাটেলাইটে নিজস্ব ভি-স্যাট থাকবে; যার মাধ্যমে ব্যাংক ও অন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস, ডাটা ও ইন্টারনেট সেবা নিতে পারবে। ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ থেকে উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্ক কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও-এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভি-স্যাট) পরিচালনার জাজ ও পদ্ধতি আরো সহজতর করবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
আয়ের সম্ভাবনা: বিটিআরসি’র হিসাবে, প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ডলার ব্যয় করে থাকে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের চালু হওয়ায় শুধু বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে না, অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান-এর মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রাথমিকভাবে আয় হবে ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪১ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে এ আয় বেড়ে হতে পারে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই হিসাবে ১৫ বছরে আয় হবে ১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের সম্প্রচারের জন্য এ্যাস্টার-৭ ব্যবহার করছে, যা ৭৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্বে। শুধু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) তাদের সম্প্রচার এশিয়াস্যাট-৭ থেকে সম্প্রচার কার্যক্রম চালায়, যা ১০৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্বে। বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের প্রতিটি টেলিভিশন স্টেশন মাসে ২৪ হাজার ডলার খরচ করে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলের বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে মোট খরচের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ ডলার।
আশা করা হচ্ছে, ক্যাবল টেলিভিশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের বিকল্প হিসেবে ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) তখন স্যাটেলাইটের অন্যতম প্রধান গ্রাহক হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ন্যূনতম আয়ুস্কাল ধরা হয়েছে ১৫ বছর। এর মধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর তিন বছর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘থ্যালেস অ্যালেনিয়া’। এর পর আমাদের দেশীয় তরুণ প্রকৌশলীদের মাধ্যমে তা পরিচালিত হবে। ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয়েছে। এই কোম্পানি স্যাটেলাইটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates