ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির অন্যতম একটি নামাজ। আল্লাহ তায়ালা মেরাজের রাতে আমাদের নবীকে (সঃ) নিজের কাছে ডেকে নিয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের আদেশ দেন। কিন্তু এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। কেন এই ভিন্ন সময়?
একদা আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) সাহাবীদের সঙ্গে বসে ছিলেন। হঠাৎ সেখানে একজন ইহুদি আসলেন। তিনি নবী করিম (সঃ) কে বললেন, ‘আপনাকে আমি একটি প্রশ্ন করব। যদি আপনি সঠিক জবাব দিতে পারেন তাহলে আমি মেনে নেব যে আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর নবী ছাড়া কোনো সাধারণ মানুষের জানা সম্ভব না।’
আমাদের নবী তাকে প্রশ্ন করতে বললেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়েছে এর নিগূঢ় তত্ত্ব কী?’
আমাদের নবী (সঃ) সেই প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়ে অর্থাৎ, যোহরের সময় হয়। তখন প্রথম আসমানে একদল ফেরেস্তা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে লিপ্ত হয়। ঐ সময়ে সব আসমানের দরজা উন্মুক্ত হয় এবং মানুষ ও ফেরেশতাগণের সকল ইবাদত আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। এই সময়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে।
আসরের ওয়াক্তে শয়তান ধোকা দিয়ে হযরত আদমকে (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ ফল গন্ধম খাইয়েছিল; ঐ সময়ে নামাজের আদেশ হবার উদ্দেশ্য এই যে, উক্ত সময়ে নামাজ পড়লে শয়তান তাকে কোনোরূপ ধোকা দিতে সক্ষম হবে না। মাগরিবের ওয়াক্তে হযরত আদম (আঃ) –এর তওবা কবুল হয়েছিল। উক্ত সময়ে নামাজ পড়ে বান্দা আল্লাহ তায়ালার নিকট যে প্রার্থনা করবে, তাই কবুল হবে।
এশার ওয়াক্ত এমনি সময় যে, আমার পূর্ববর্তী যাবতীয় নবীগণের ও তাদের উম্মতগণের উপর এশার নামাজ ফরজ ছিল। এ নামাজ পড়লে যাবতীয় পয়গম্বরগণের উপর আদিষ্ট নামাজের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর ফজরের ওয়াক্তের মর্ম এই যে, যখন সূর্য উদিত হয়, তখন তা শয়তানের মাথার উপর উদিত হয়। সেই সময় কাফের –মুশরিকগণ তাদের দেব–দেবিকে উদ্দেশ্য করে শয়তানকে সেজদা করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আমার উম্মতগণকে এর পূর্বেই নামাজ পড়তে আদেশ করেছেন, যাতে আমরা কাফের –মুশরিকগণের অন্তর্ভুক্ত না হই।’
এটি শুনে সেই ইহুদি বললেন যে, ‘বুঝলাম ! আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী।’ এই বলে তিনি সদলবলে মুসলমান হয়ে গেলেন ।
আমরা নামাজের সময় হলে কেউ অলসতা করে, কেউ কাজের অজুহাতে নামাজ পড়তে গাফেলতি করি । এর ফলে অনেক সময় ওয়াক্ত চলে যায়। আমরা যদি ওয়াক্তমতো নামাজ না পড়ি তাহলে কখনোই এর পূর্ণ ফযিলত পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই নামাজের ৭টি আহকাম –এর একটি ‘ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া’। এ ছাড়াও নামাজ সঠিক সময়ে না পড়লে বা কাযা করলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত সঠিক সময়ে জামাতের সঙ্গে সহিহভাবে নামাজ আদায় করা।
No comments:
Post a Comment