হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, সৌদি আরবে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ২ হাজার ৩০৫ জনকে আটক করে রাখা হয়েছে। কাউকে আবার ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ তাদের আদালতে তোলা হচ্ছে না।
এইচআরডব্লিউ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সৌদি আরবে নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। গত ৩১ মার্চ থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশটিতে বিনা অপরাধে ৫ হাজার ৩১৪ জন আটক রয়েছেন। তাদের মধ্যে গত ৬ মাসের মধ্যে আদালতে তোলা হয়নি এমন কারাবন্দির সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮০ জন। প্রায় এক বছর ধরে কারাগারের অন্ধ কুঠরিতে বন্দি রয়েছেন প্রায় দুই হাজার ৯৪৯ এবং তিন বছরের রয়েছেন ৭৭০ জন।
২০১৪ সালের মে মাসে আরেকটি রিপোর্টে এইচআরডব্লিউ জানায়, হাজার হাজার কারাবন্দির মধ্যে মাত্র ২৯৩ জনকে আদালতে তোলা এবং তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। গত তিন বছরে সৌদি কর্তৃপক্ষ মাত্র ২৫১ কারাবন্দিকে তদন্তের আওতায় এনেছে, যাদের মধ্যে ২৩৩ জন সৌদি নাগরিক। বিনাবিচারে আটক থাকা এসব বন্দিকে বিচারের আওতায় আনতে ১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আ্যটর্নি জেনারেল শেইখ সৌদ আল-মজিবের কাছে চিঠি লেখে এইচআরডব্লিউ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক সারাহ লিয়াহ উইটসন বলেন, ‘সৌদি কর্তৃপক্ষ যদি তাদের মাসের পর মাস আটকে রেখে কোনো চার্জগঠন না করে, তা হলে দেশটির বিচার বিভাগের ভঙ্গুরতা ও অন্যায্যতার প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশটিতে এ চিত্র দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
২০১৭ সালের নভেম্বরে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে সৌদি আরবে বেশ কয়েকজন প্রিন্সসহ পাঁচ শতাধিক অভিজাত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং রাজপরিবারের নারী সদস্যও ছিলেন। তবে ওই ধরপাকড়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছেন।
জীবনযাত্রা বদলেছে সৌদি আরবে, নির্মাণ হচ্ছে গির্জাও
সৌদি আরবকে পুরো মাত্রায় বদলে দিচ্ছেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সবখানেই সংস্কারের ছোঁয়া।
নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে ‘কোয়ালিটি অব লাইফ প্রোগ্রাম ২০২০’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের অর্থনীতি ও উন্নয়ন কাউন্সিল। ৩৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোয়ালিটি অব লাইফ প্রকল্পটি দেশটির অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যকরণ ও তেলনির্ভরতা কমাতে ভিশন ২০৩০-এর একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য দেশটির অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিনোদন ও ক্রীড়া খাতে নতুন বিনিয়োগে সুযোগ সৃষ্টি করা।
কোয়ালিটি অব লাইফ প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ১৩০ বিলিয়ন রিয়ালের মধ্যে ৭০ বিলিয়ন রিয়াল বাণিজ্যিক বিনিয়োগ করা হবে। এর উদ্দেশ্য ২০২০ সালের মধ্যে তেল ব্যতীত জাতীয় উৎপাদনে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
অন্যদিকে সৌদি আরবে গির্জা প্রতিষ্ঠা করতে স্থানীয় এক ওয়াহাবি নেতা ও ভ্যাটিকানের কার্ডিনালের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশটিকে এক নতুন পরিচয় ও রূপে হাজির করতে চাচ্ছেন।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য গঠিত বিশপ পরিষদের প্রধান জন লুইস তাওরিন গত মাসে এক সপ্তাহের জন্য সৌদি সফরে গিয়েছিলেন। রিয়াদ সফরে লুইস তাওরিন সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানসহ বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
সৌদি আরবের অন্যতম ওয়াহাবি এনজিও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ বিন আবদেল কারিম আল ইসসা ও লুইস তাওরিনের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হয়েছে। তারা কেবল একটি উপাসনালয় নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হবেন না, প্রতি দুই বছর পর পর মুসলিম-খ্রিষ্টান সম্মেলনের আয়োজন করারও পরিকল্পনা করেছেন। গত কয়েক দশকে সৌদি আরবে বহু অমুসলিম অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটিতে এখন প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী রয়েছেন।
আরটি অনলাইন ও আল আরাবিয়া
No comments:
Post a Comment