Wednesday, April 27, 2016
শেষ বলের রোমাঞ্চ তিন ম্যাচেই
মাশরাফি বিন মর্তুজা পারেননি, পারেননি রাজিন সালেহও; কিন্তু পেরেছেন মুক্তার আলী। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে গতকাল এঁদের তিনজনের সামনেই ব্যাট হাতে নিজ নিজ দলকে জিতিয়ে ‘শেষ বলের নায়ক’ হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত ছিল। প্রথম দুজন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও পেরেছেন শেষের জন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আবাহনীর বিপক্ষে জেতার জন্য শেষ বলে ৫ রান দরকার ছিল ২৮৭ রান তাড়া করতে নামা শেখ জামাল ধানমণ্ডির। যদিও ওপেনার মাহবুবুল করিমের ১৩০ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে তাঁদের সহজ জয়ের প্রত্যাশা টানটান উত্তেজনায় বদলে দেন আবাহনীর তাসকিন আহমেদ। এ পেসারেরই ফুল লেন্থে করা ম্যাচের শেষ বলটি সোজা ব্যাটে ছক্কার ঠিকানায় পাঠিয়ে জামালকে ৪ উইকেটের জয় এনে দেওয়া মুক্তার এরপর সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দে এমন চিত্কার-চেঁচামেচি করেছেন যে গলা ভেঙে চৌচির! জয়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কথাই বলতে পারছিলেন না ঠিকমতো। ফতুল্লায় মুক্তারের মতো দলকে জেতাতে পারলে নিশ্চয়ই একই রকম উল্লাসে গলা ফাটাতেন মাশরাফিও। কারণ এবার যে তাঁর ঠাঁই হয়েছে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে, যেটি শিরোপা সম্ভাবনায় থাকা দল ছিল না কখনোই। আর এমন দলে খেলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখার খুব কাছেই চলে গিয়েছিলেন। নাসির হোসেনের (৭৫ বলে ৯৭) সেঞ্চুরি বঞ্চনার দিনে ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেনের (৭৩) ফিফটিতে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ২৮৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করানোর পরও। শেষ বলে কলাবাগানের চাই ৬ রান আর ব্যাটিংয়ে মাশরাফি। ওদিকে দোলেশ্বরের বোলার মাশরাফিরই জাতীয় দল সতীর্থ আল-আমিন হোসেন। জিততে হলে যেখানে ছক্কা মারতেই হবে, সেখানে মাশরাফি ১ রান নিয়ে আরেকটি নিতে গিয়ে রানআউট। তাই দোলেশ্বরের ৪ রানের জয়ে কলাবাগানের হতাশা। বিকেএসপিতে একই হতাশা ক্রিকেট কোচিং স্কুলেরও (সিসিএস)। সাইফ হাসান (১০০) ও সালমান হোসেনের (১১০) সেঞ্চুরিতে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ২৫৭ তাড়া করে জেতা তো কেবলই সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘোরানোয় প্রাইম ব্যাংকের পেসার রুবেল হোসেনের ভূমিকাও কম নয়। শেষ ওভারে সিসিএসের দরকার ছিল ১৫ রানের। এর মধ্যে প্রথম ৫ বলেই ৯ উঠে যাওয়ায় শেষ বলে দরকার ৬ রানের। ব্যাটিংয়ে সিসিএস অধিনায়ক রাজিন সালেহ আর বোলার রুবেল। এ পেসার ব্যাটসম্যানকে শেষ বলে অবশ্য কোনো রানই নিতে দিলেন না। তাতে দ্বিতীয় ম্যাচে এসে প্রাইম ব্যাংকের প্রথম জয়টি ৫ রানের। আর আবাহনীর এটি দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম হার। মুক্তারের পূর্ব অভিজ্ঞতাও যে হার নিশ্চিতকরণে কাজে দিয়েছে খুব। শেষ বলে মারা ছক্কায় আবাহনীর বিপক্ষে নিজ দলকে জেতানোর সাফল্যের পুনরাবৃত্তিই বলা যেতে পারে এটিকে। কারণ গতকাল বিকেলেও ২০১২-১৩ মৌসুমে শেষ বলে ছক্কা মেরে আবাহনীর বিপক্ষে গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্সকে জয় এনে দেওয়ার সুমধুর স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত এ পারফর্মার। তাঁর ২ বলে অপরাজিত ৭ রানের মূল্যবান ইনিংস শেখ জামালকে টানা দ্বিতীয় জয়ের বৈতরণী পার করে নিলেও এর ভিত্তিটা তৈরি করে দেওয়া মাহবুবুল করিমের। যাঁর চলতি প্রিমিয়ার লিগ খেলার পেছনেও আছে আবাহনীর ছোঁয়া। প্লেয়ার্স বাই চয়েস নামের লটারিভিত্তিক দলবদলের খেলোয়াড় তালিকায় এ ওপেনারের নাম শুরুতে ছিলই না। পরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘শুরুতে আমার নাম তালিকায় ছিল না। পরে আমি একটা ব্যবস্থা করার জন্য আবাহনী কর্মকর্তা জালাল ইউনুস ভাইকে (বিসিবি পরিচালক) অনুরোধ করি। আমার এবারের লিগ খেলার পেছনে তাই ওনার অনেক বড় ভূমিকা।’ মাত্র ৩০ বলে দুই ছক্কা ও আট বাউন্ডারিতে ফিফটি করে ফেলার পর জালালও এ আশঙ্কাই করছিলেন যে মাহবুবুল আবার একাই আবাহনীকে হারিয়ে দেন কি না! মাত্র ৮১ বলে ১১ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে আরেকটি সেঞ্চুরি করা মাহবুবুল ১১০ বলে ৫ ছক্কা ও ১৫ বাউন্ডারিতে ১৩০ রান করে যাওয়ার পর সেই আশঙ্কা সত্যি হতে খুব বাকিও ছিল না। তাই আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবালের ৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস কিংবা ভারতীয় ক্রিকেটার উদয় কাউল (৬৩) কিংবা নাজমুল হোসেনের (৫২*) ফিফটিও বিফলে যাওয়ার পথে ছিল। সেখান থেকে তাসকিনের বোলিংয়ে ম্যাচ ঘুরলেও আবাহনীর শেষ রক্ষা হতে দেননি মুক্তার!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment