প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) এবার আরও উন্নত প্রযুক্তির ‘ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট’ তৈরির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেছেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সুবিধা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক পাসপোর্টসহ নিরাপদ ভ্রমণ ডকুমেন্ট চালুর মাধ্যমে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক করে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
রবিবার আগারগাঁওয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে ‘পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ-২০১৬’ এবং বিভাগীয় আঞ্চলিক ১০টি পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাসপোর্ট হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতীক। এটি জাতির মর্যাদা বহন করে। হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিস নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাসপোর্ট সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় একটি করে পাসপোর্ট অফিস থাকবে।
এই খাতকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে সরকার গত সাত বছরে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট চালু হওয়ার পরে পাসপোর্ট ইস্যুতে প্রতারণার অবসান ঘটবে। এখন আরও নতুন প্রযুক্তি এসে গেছে। তাই ইলেকট্রনিক পাসপোর্টও আমরা তৈরি করব, এ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। এই অধিদফতরকে ডিজিটাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ‘পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার : নিঃস্বার্থ সেবাই অধিকার’Ñ এই সেøাগান নিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ পালিত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং ডিআইপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন। বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০টি নতুন পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। নতুন এই পাসপোর্ট অফিসগুলো হলোÑ ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো হলো কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা ও দিনাজপুর।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগর আদর্শ মহিলা কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী কলেজটির জন্য আটতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণেরও ঘোষণা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পাসপোর্ট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা এবং সেখান থেকে মানুষের সেবা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে এই সেবা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। কাজেই ওই ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই মানুষ তার পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবে, সেইভাবে সমস্ত দেশে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করছি। এই ডিজিটাল ব্যবস্থার মধ্যেই মানুষ তার সেবাটা যেন পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এটা আরও দ্রুত কার্যকর হবে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রবর্তনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২০১০ সাল থেকে এমআরপি কার্যক্রম হাতে নেয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার যেসব জেলা থেকে বেশি মানুষ বিদেশ যায় সেসব স্থানে পাসপোর্ট সেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়। ইতোমধ্যে এক কোটি ৪০ লাখ এমআরপি পাসপোর্ট এবং তিন লাখ ২৬ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা দেয়া হয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। অনেকে এই পদক্ষেপের ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু ভিআইপি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার; এটার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় তারা এ রকম পদক্ষেপই নেয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসেই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেই।
No comments:
Post a Comment