নাম পরিচয় ও ঠিকানাহীন একটি এতিম মেয়ে অবশেষে পেয়েছে পরিচয় ও ঠিকানা। জীবনের ১৯টি বছর কেটেছে বিভিন্ন বেবী হোম, শিশু সদন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মহা ধুমধামের সাথে আফরিদা খাতুন নামে এই এতিম মেয়েটিকে পাঠানো হলো স্বামীর বাড়ি।
শুক্রবার অন্য দশটি বিয়ের মতো সব অনুষ্ঠানিকতা করেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এখন দুই চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন বুনছে স্বামী, সংসার নিয়ে বাকি জীবন পার করে দেয়ার। আর মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে মা-বাবার দায়িত্ব পালন করছে এমনটি বলছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছিল আফরিদা খাতুন। কিন্তু সে আলোতে ছিল শুধু অন্ধকারের ছায়া। এক বছর বয়সে ঠাঁই হয় রাজশাহীর বেবী হোমে। ৬ বছর বয়সে তাকে পাঠানো হয় নওগাঁ শিশু পরিবারে। এরপর যশোর শিশু পরিবার হয়ে ঠাঁই হয় টুঙ্গীপাড়া শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আর এভাবেই জীবনের ১৯টি বছর কাটলেও জানে না কে তার মা-বাবা।
যৌবনে পা দেয়া মেয়েটিকে সঠিক জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার অন্য দশটি বিয়ের মতো সব আনুষ্ঠানিকতা করেই আফরিদার বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দুই লাখ টাকা দেনমোহরানায় নাফিউল আসাদ রুবেলের সাথে কাবিন করেন মেয়ের উকিল পিতা পুনর্বাসন কেন্দ্রের হাউজ প্যারেন্ট মো. কামরুল জামান ঠাকুর।
আফরিদা খাতুনকে বিয়ে দেয়া হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের নাফিউর আসাদ রুবেলের সাথে। ছেলেটি একজন মুদি দোকানী। বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রায় ৫শ' লোক খাওয়ানো হয়। খাদ্য তালিকায় ছিলো কাচ্চি বিরানী, মুরগীর রোস্ট, ডিম, দই, মিষ্টি ও কোমল পানীয়।
অন্যান্য বিয়ের মত এই বিয়েতেও কোন কিছুর কমতি রাখেনি প্রশাসন। টিভি, ফ্রিজ, ডিনারসেট, সেলাই মেশিন, মুদি দোকানের মালামাল সামগ্রীসহ অন্যান্য গৃহস্থলী পণ্য দেয়া হয়।
আফরিদা খাতুনের বিয়ে উপলক্ষে লাল-নীল-বেগুনী রঙের কাগজ কেটে রশিতে টানিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সাজিয়ে সহপাঠির বিয়ের আনন্দে মেতে ওঠে এতিম তিন'শ নিবাসী শিশু। বৃহস্পতিবারের গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কাল শুক্রবার দিন-ভর চলে নানা অনুষ্ঠানিকতা। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করে তারা।
শুক্রবার বিকালে বিয়ে শেষে নতুন দম্পতিকে স্থানীয় রীতিতে দুধ-ভাত খাইয়ে সব অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিদায় জানানো হয়। কামনা করা হয় নতুন এই দম্পতি থাকে যেন দুধে ভাতে।
অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোমিনুর রহমান, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর মল্লিক, ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ফারহানা নাসরিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও আশাশুনি উপজেলার বরের এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment