পারস্পরিক বিশ্বাসের মধ্যেই সম্পর্কের ভিত নিহিত। কিন্তু কোনো কারণে সেই আস্থার জায়গা নড়বড়ে হলে সম্পর্কে চিড় ধরবেই। এ সমস্যার সমাধান করে নতুনভাবে দাম্পত্য শুরু করার কিছু ভাবনা নিয়ে লিখেছেন নওশীন শর্মিলী
গত মাসটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে নীলার। হঠাৎ একদিন এক বান্ধবীর মাধ্যমে সে জানতে পারে, তার স্বামী হৃদয় অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। কথাটি শুনে নীলা উত্তেজিত হলেও পরক্ষণে নিজেকে শান্ত করে ঘটনাটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তাই হূদয়ের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে। সপ্তাহ খানেক পর বিষয়টির সত্যতা সে বুঝতে পারে। বিষয়টি নিয়ে নীলা সরাসরি হূদয়কে প্রশ্ন করলে তার স্বামী সত্যটা স্বীকার করে এবং জানায় মেয়েটি তার সহকর্মী। নীলা তখন মেয়েটির সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলে। কিন্তু এতে হূদয় রাজি হয়নি। আর তখনই দুজনার মধ্যে ঝগড়া, কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কয়েকদিন এভাবে চলার পর সংসারে চরম অশান্তি দেখা দেয়। এর কারণ হিসেবে হূদয় নীলাকেও দোষারোপ করে তার প্রতি উদাসীনতার জন্য। একসময় একে অপরের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দুজনের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে। এর প্রভাব পড়ে ৩ বছর বয়সী কন্যা উর্মিলার ওপর। সংসারের এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে নীলা। পুরো বিষয়টি ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নীলা সিদ্ধান্ত নেয় তাকেই আগে পদক্ষেপ করতে হবে। তাই নিজের ভুলভ্রান্তির জন্য হূদয়ের কাছে ক্ষমা চায় এবং স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য ও টেককেয়ার বাড়িয়ে দেয়। এতে কয়েকদিনের মধ্যে হূদয়ও নিজের ভুল বুঝতে পারে। সেও নীলার কাছে ক্ষমা চায়। সেই সঙ্গে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন করে। হূদয়ের অনুতপ্ত চেহারা দেখে নীলা তাকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী নিজেদের পারস্পরিক বিশ্বাস কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন, তা বুঝতে পারে না।
নতুন ভাবনা:
* আপনার সঙ্গী যদি তার ভুল মেনে নিয়ে দাম্পত্য জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান, তা হলে তাকে সেই সুযোগ দিন। এ ব্যাপারে সাহায্য না করলে আপনিও কিন্তু পরোক্ষভাবে তাকে ঠকাচ্ছেন।
* সে আস্থা নিয়ে তিনি আপনার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন তার যোগ্য চাহিদা না দিলে আপনিও কিন্তু আস্থাভঙ্গের দায়ে দায়ী হবেন।
* মনে রাখবেন, ভুল স্বীকার করা কিন্তু সহজ নয়। আপনার সঙ্গী যদি সেই কঠিন কাজটা করতে পারেন, আপনিও বা কেন পিছিয়ে থাকবেন?
* নিজেকে কিছুটা সময় দিন। সঙ্গীর বিশ্বাসভঙ্গ সহজে মেনে নেওয়া যায় না। নিজের সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা করে দেখুন গলদটা ঠিক কোথায়?
* কোনো বিশ্বাসভাজন বন্ধু বা কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলুন। অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তি সহজেই নিজস্ব ভঙ্গিতে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় সমাধান খুঁজে দিতে পারেন।
* নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা বিশ্লেষণ করুন। দেখবেন সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে গেছে।
কী করবেন:
* একে অপরকে আরও একটু বেশি সময় দিন। হয়তো সম্পর্কে এমন কিছু ফাঁক ছিল যা আস্থা হারানোর জন্য দায়ী।
* নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ান। আপনার সঙ্গীকে শুধু আপনার স্বামী বা স্ত্রী অথবা সন্তানের অভিভাবক না ভেবে একজন আলাদা মানুষ হিসেবে দেখুন। অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটির মধ্যে থেকে খুঁজে পেতে পারেন এক সম্পূর্ণ নতুন অনুষঙ্গকে নতুন বন্ধুকে।
* অন্যান্য কাজের চাপ থাকলেও দাম্পত্যকে গুরুত্ব দিন। দাম্পত্যের জন্য হাতে কিছুটা সময় রাখা জরুরি।
* নিজের দিকে নজর দিন। নিজেকে নিজের ভালো না লাগলে সম্পর্কে ও তার কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য।
* সঙ্গী সময় করে উঠতে না পারলেও নিজের পছন্দের অবসরকে বাদ দেবেন না। বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে কিংবা একই বেড়াতে যান বা শপিং করুন।
* চেহারার যত্ন নিন। অনেক নারীই মা হওয়ার পর অন্য সবদিক ভুলে যান। নিজেকে ফিটফাট রাখলে নিজের মন ভালো থাকবে এবং স্বামীও খুশি হবেন।
No comments:
Post a Comment