Social Icons

Thursday, January 26, 2017

ঐশ্বর্যের দিক থেকে ব্রাজিলের কোনো তুলনা হয় না।


ব্রাজিল দেশটা যত দেখছি, রহস্য ততই ঘনীভূত হচ্ছে। রিও ডি জেনিরো থেকে এলাম ব্রাসিলিয়া। সেখান থেকে সাও পাওলো।

১৯৬০-এর দশকে তারা রাজধানী শহর ব্রাসিলিয়াকে বানিয়েছে একটি পরিকল্পিত শহর। স্থপতির নাম ব্রাজিল ফুটবল দলের দুই খেলোয়াড়ের নামে, অস্কার নিয়েমের। ওটাকে নেইমার বললেই চলে। আরেকজন স্থপতির নাম লুসিও কস্টা। ষাটের দশকের এই আধুনিকতা বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজের ওপরও হয়তো ছাপ ফেলে থাকবে। আমাদের স্থপতিদের বানানো ভবনগুলোর সঙ্গে কোথায় যেন মিল আছে।
ব্রাজিল বাংলাদেশের চেয়ে ৬০ গুণ বড়, লোকসংখ্যা ২০ কোটি ৬০ লাখের  মতো। এদের জনসংখ্যা ৯৬০ কোটি হলে ঘনত্বটা বাংলাদেশের সমান হতে পারত। কাজেই জায়গা কোনো সমস্যা নয়, ব্রাসিলিয়ার গারিঞ্চা স্টেডিয়ামের চারদিকে কত জায়গা যে ফাঁকা রাখা হয়েছে।
ব্রাসিলিয়া থেকে উড়ে এলাম সাও পাওলো। কোকাকোলার সৌজন্যে একটা সিটি টুরও দেওয়া হলো। গাইড ভদ্রলোক আদিতে জার্মানি। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখালেন শহরটা। এখানে অনেক বিলিয়নিয়ারের বাস। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাড়ির শোরুম আছে এখানে। এমন সুপার মল আছে, যেখানে শপিং করে ফেরার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া পাওয়া যায়, আপনার শপিং ব্যাগ বহন করার জন্য উর্দিপরা লোকেরা পেছনে ঘুরে বেড়ায়। এসব এলাকায় সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। অনেকটা নিউইয়র্কের মতো এই সাও পাওলো। ওরা অবশ্য বলেন, সান পাওলো। 
এই শহরে লাভস্টোরি নামে একটা ব্যাপার আছে, ছেলেমেয়েরা কোনো একটা জায়গায় জড়ো হয়, সেখান থেকে অচেনা কাউকে বাছাই করে নিয়ে যায়, এক রাতের জন্য বন্ধুত্ব করে, তারপর ভোরবেলা যে যার পথে নাকি চলে যায়। বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠানটা ভেঙে পড়ছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক সার্জারি করে ব্রাজিলের মেয়েরা।

ব্রাজিলের বেশির ভাগ ফুটবলারই এসেছেন  দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে। বিমানের টেলিভিশনে ব্রাজিলের বর্তমান টিমের সদস্যদের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখছিলাম। অস্কারের স্কুল দেখলাম, গুস্তাভোর ছেলেবেলা। সবাই প্রায় গ্রামগঞ্জ শহরতলির সাধারণ ঘরের ছেলে। তাদের স্কুল, বাবা-মায়ের বাড়িঘর—সবই সাধারণ।
ব্রাজিলের ১৯৭০ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের একজন সদস্য তার সোনার মেডেল বিক্রি করে দিয়েছিলেন সংসার চালানোর জন্য।
এক দিকে চরম দারিদ্র্য, আরেক দিকে সম্পদের পাহাড়।
আর ক্ষমতাসীন নেতার মেয়ে সবচেয়ে বড়লোকদের একজন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দেশের চার নম্বর শীর্ষ ধনী। সে কারণেই দেশের মানুষ বি‌ক্ষোভ করেছে, তাদের বিক্ষোভ ফুটবলের বিরুদ্ধে নয়।
অন্যদিকে মাত্র ৫০০ বছর আগেও আমেরিকা মহাদেশটা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল উপনিবেশকদের কাছে। পর্তুগিজরা আসার আগে দেশে নাকি ৩০-৪০ লাখ আদিবাসী ছিল, এখন আছে বড়জোর তিন লাখ। পর্তুগিজরা এল, এর ভাষা বানাল পর্তুগিজ, রোমান ক্যাথলিকদের ধর্ম হলো এখানকার ধর্ম। সারা ইউরোপ থেকে অভিবাসীরা এসেছে এখানে। আরব প্রভাবও আছে।  ১৮০৭ সালে নেপোলিয়ান পর্তুগাল আক্রমণ করলে পর্তুগালের রাজা ব্রাজিল চলে আসেন। তারপর ছেলের হাতে ভার দিয়ে তিনি ফিরেও যান ১৮২০ সালে। সেই ছেলেকে তিনি পর্তুগালে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলে ছেলে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৮২২ বা ১৮২৫ থেকে এরা স্বাধীন। ২৫-৩০ হাজার মুসলিম আছে এখানে। কত বিচিত্র রঙের মানুষই না আছে এখানে। সাদা-কালো, কালোদের আনা হয়েছিল ক্রীতদাস হিসেবে, আফ্রিকা থেকে। বাদামি, খয়েরি।
  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলুন, আর মানুষের তৈরি ‘ওয়ান্ডার’ বলুন, ঐশ্বর্যের দিক থেকে ব্রাজিলের কোনো তুলনা হয় না। আমাজন থেকে শুরু করে করকাভো পাহাড়ের ওপরে স্থাপিত ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার নামের বিশাল ভাস্কর্য। সেখান থেকে রিও শহরটাকে যে কী সুন্দর লাগে।
সাও পাওলো নেইমারেরও জন্মস্থান। বাবা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। নেইমারেরও শুরুটা রাস্তায় ফুটবল খেলেই, ১১ বছর বয়স থেকেই আনুষ্ঠানিক ফুটবল প্রশিক্ষণ নেওয়া। ১৪ বছর বয়সেই ডাক এসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ থেকে।
নেইমারের এক বোন আছে, তিনি মডেলিং করছেন।
নেইমারের খেলার মধ্যে একটা অন্য রকমের সৌন্দর্য আছে। প্রজাপতির মতো মনের আনন্দে ঘুরে ঘুরে খেলছেন। খেলতে খেলতে দুষ্টুমি করেন। চোখ টেপেন। এর ওর ঘাড়ে চড়ে বসেন। শারীরিক শক্তি দিয়ে নয়, খেলেন মেধা দিয়ে। আবার সেরা ফুটবলারদের যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা থাকে, নেইমারের সেটা খুব সক্রিয় ও প্রবল, ঠিক জায়গায় ঠিক মারটা ঠিকই মারেন। কত দূর থেকে কী নির্ভুল শট।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates