মিয়া মিজানুর রহমান কাজল। একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। বর্তমানে তিনি রয়েছেন সৌদি আরবে। সেখানে তিনি ওমরা পালন করছেন। সব ব্যস্ততার পাশাপাশি নিজের চোখে দেখা সৌদি আরবের বিশেষ বিশেষ দর্শনীয় ও পবিত্র স্থানগুলো শেয়ার করছেন সবার সঙ্গে। সৌদি আরবে বসে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া তার আজকের প্রতিবেদন ‘রিয়াজুল জান্নাহ’।
রিয়াজুল জান্নাহ। এটি পৃথিবীতে জান্নাতের একমাত্র অংশ। যেটিকে বলা হয়- জান্নাতের বাগান। নবী করিম (সাঃ) হিযরতের পর যখন মদিনাতে আসলেন তখন এই এলাকাটির সকলেই তার উটের রশি ধরে টানাটানি করতে থাকলেন, যেন তাদের বাসায় নবীজি অবস্থান করেন।
নবীজি সবাইকে বললেন, ‘আমার উটের রশি ছেড়ে দাও এবং উটটি যে বাড়ীর সামনে বসবে আমি তারই মেহমান হবো।’
উটটি একটি বাসায় বসার পরে নবীজি তার মেহমান হলেন এবং পাশের দুই এতিম বালকের কাছ থেকে একটি জায়গা কিনে তিনি মসজিদ ও বসবাস করতে থাকলেন। ‘মসজিদে নববী’ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মসজিদ হলেও এর ভিতরের এই অংশটুকুই (ভিডিওতে) সেই নবীজির ক্রয় করা অংশ এবং তিনি এখানেই নামাজ পড়াতেন।
এর বাম পাশেই নবীজি শায়িত আছেন। বৃহৎ এই মসজিদের ভিতর জুড়ে লাল কার্পেট, আর শুধুমাত্র এই অংশে সবুজ কার্পেট। এই অংশে নামাজ পড়া মানে আপনি জান্নাতে বসে নামাজ পড়লেন। এই অংশের সোজা উপরেই হাসর হবে। পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দুই রাকাত নামাজ পড়তে এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। দুই রাকাত নামাজের পড়া হলেই পুলিশ সড়িয়ে দেন। অনেকে সেখান পর্যন্ত যেতেও পারেনা।
আমি এই মসজিদে আলহামদুলিল্লাহ সারারাত কাটিয়েছি এবং এই অংশে প্রতিদিন গিয়ে অধিক রাকাত নামাজ পড়তে পেরেছি। এখানে আমি একঘণ্টা দাঁড়িয়ে ইবাদত করেছি যা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
পুলিশ আমাকে সরিয়ে দেয়নি, কারণ তখন মাগরিবের ওয়াক্ত ছিল আর এজন্য সেই সময়ে যারা অবস্থান করছিল তারা সবাই থাকতে পেরেছে। আমার স্ত্রীও যেতে পেরেছেন একদিন। তবে মেয়েদের সময় ভিন্ন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে নিজের সহ আপনাদের সকলের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া চেয়েছি।
মসজিদে নববীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
[মসজিদে নববী। মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ। যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। মুহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদ দিনরাতের সবসময় খোলা থাকে।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীকালের মুসলিম শাসকরা মসজিদ সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপের মধ্যে এখানেই সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। মসজিদ খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মসজিদ ঐতিহ্যগতভাবে মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। মসজিদে নববী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান বিধায় হজ্জের সময়ে আগত হাজিরা হজ্জের আগে বা পরে মদিনায় অবস্থান করেন।
উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে সম্প্রসারণের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এবং প্রথম দুই খুলাফায়ে রাশেদিন আবু বকর ও উমরের কবর মসজিদের অংশ হয়। মসজিদের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত সবুজ গম্বুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি আয়িশার বাড়ি ছিল। এখানে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তার পরবর্তী শাসক দুইজন খলিফাকে দাফন করা হয়। ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে কবরের উপর একটি কাঠের গম্বুজ নির্মিত হয়। এটি পরবর্তীতে ১৫শ শতাব্দীতে কয়েকবার এবং ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে একবার পুনর্নির্মিত ও সৌন্দর্যবর্ধিত করা হয়।
বর্তমান গম্বুজটি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ কর্তৃক নির্মিত হয়। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সবুজ রং করা হয় ফলে এর নাম সবুজ গম্বুজ হয়েছে।]
চলবে ...
No comments:
Post a Comment