একুশ শতকের গোঁড়ার দিকে দক্ষিণ আমেরিকার তরুণদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল।
তাদের ধারণা ছিল সে অঞ্চলে নতুন সূর্যোদয় হতে যাচ্ছে।
ভেনিজুয়েলার হুগো চাভেজ কিংবা ব্রাজিলের লুলা ডি সিলভা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেসব দেশের জনগণকে।
কিন্তু দুই দশক পরেও সে প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বামপন্থী রাজনীতির শক্তি ক্ষয় হয়েছে এবং ডানপন্থীদের উত্থান হয়েছে।
আর্জেন্টিনা এবং চিলির মতো দেশে ডানপন্থার বিস্তার ঘটেছে।
অন্যদিকে কয়েকসপ্তাহ আগে ব্রাজিলের লুলা ডি সিলভা দুর্নীতির মামলায় ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
গতমাসে পেরুর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন পেরুর প্রেসিডেন্ট।
এ বছরের মধ্যেই ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো এবং ব্রাজিলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এসব নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে ল্যাটিন আমেরিকায় বিশ্বাস সবচেয়ে কম।
জরিপে দেখা গেছে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে। সা পাওলোতে পাবলিক সিকিউরিটি বিষয়ে বিশ্লেষক রবার্টো স্টলফি।
তিনি বলেন, "পাঁচ বছর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করতেন, গণতন্ত্র হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকায় গণতন্ত্রের একটি ঢেউ আমরা দেখলাম। এরপর মনে হচ্ছে, শুধু গণতন্ত্রই যথেষ্ট নয়। এটাকে ভালোভাবে কাজ করতে দিতে হবে। মানুষের মাঝে বৈষম্য এবং আরো নানা ধরনের বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান করা দরকার।"
একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে।
ব্রাজিলে এখন বহু মানুষ মনে করছেন, দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে সামরিক শাসন ফিরে আসা দরকার।
ব্রাজিলে প্রায় দুই দশক ধরে স্বৈরশাসনের কবলে ছিল।
আবারো ব্যাখ্যা করছিলেন মিস স্টলফি, "জননিরাপত্তা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে, ইতিহাস রয়েছে। সামরিক শাসনের অবসানে হবার পরেই, অর্থাৎ আমরা যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে গেলাম, তখন সহিংসতা আবার ফিরে আসলো। এর মূল কারণ হিসেবে অনেকে মনে কতো যে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে গেছে। পুলিশ যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, মানবাধিকার সঠিক অবস্থায় নেই। জননিরাপত্তার প্রশ্নে মানবাধিকারের বিরোধিতা করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।"
কিন্তু গণতন্ত্র নিয়ে যে সংকট সেটা ব্রাজিল কিংবা অন্য যে কোন দেশে নতুন কিছু নয়।
এমনটাই মনে করেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্ণান্দো হেনরিকে কার্দোজো।
মি: কার্দোজোর মতে, "সমাজ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারছে কিভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে হয় এবং কে কার প্রতিনিধিত্ব করছে। গণতন্ত্রের যেসব মূল্যবোধ আছে সেগুলোকে আবার আমাদের মনের ভেতরে নতুন করে গড়তে হবে। আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। মানুষজন কী বলছে সেগুলো শুনতে এবং দেখতে হবে। এটা খুব সহজ কাজ নয়। সেজন্য নেতৃত্বের গুণাবলী থাকতে হবে।"
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মানুষ নেতৃত্বকে বিশ্বাস করে না।
ব্রাজিলের লক্ষ-লক্ষ মানুষ মনে করে সেখানে গণতন্ত্র নেই।
তাঁরা মনে করেন, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জিলমা রুসেফের ইমপিচমেন্টের পরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নিয়েছেন।
কিন্তু তিনি নির্বাচিত নন। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট মি: কার্দোজো মনে করেন ভিন্ন কথা।
মি: কার্দোজো বলেন, "আমাদের এখানে গণতন্ত্র আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি গণতন্ত্রকে কিভাবে দেখবেন? আমরা আইন অনুসরণ করছি। আমরা সংবিধান অনুসরণ করছি। আমাদের বাক স্বাধীনতা আছে। কিন্তু যেটার ঘাটতি রয়েছে সেটা হচ্ছে বৈধতা।"
এজন্যই মানুষ নতুন ধরনের নেতৃত্ব খুঁজছে।
মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী অন্য প্রার্থীদের সাথে বিরোধে জড়িয়েছেন।
অন্যদিকে আগামী অক্টোবরে ব্রাজিলের নির্বাচনে ডানপন্থী যে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি ব্রাজিলের ট্রাম্প হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম মতপার্থক্য আছে, কিন্তু তারা বর্তমান ধারার রাজনীতি থেকে জনগণকে মুক্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে তারা ল্যাটিন আমেরিকায় বিভেদ কমিয়ে আনতে পারবেন কিনা।