প্রায় ১২ বছর ধরে সৌদি আরবে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের তাসলিমা আক্তার। ভাল চাকরির কথা বলে তাঁকে এক সৌদি নাগরিকের কাছে বিক্রি করে দেয় লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং গ্রামের আলম হোসাইন নামের এক দালাল। দীর্ঘ দিন ধরেই সেখানে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাসলিমা।
তামলিমার বাবা জানান, ২০০৭ সালে আলম তাঁর মেয়েকে সৌদি নিয়ে যান। সেখানে ৫ লাখ টাকায় তাঁকে বিক্রি করে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তাসলিমার বাবা। তিনি আরও জানান, তাসলিমাসহ একই উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের সুরুজ খাঁনের ভাগিনা সবুজ খাঁন ও ভবানীপুর গ্রামের আলী মিয়ার মেয়ে আমেনা আক্তারকে সৌদি আরবে কাজে পাঠানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয় আলম। তবে তাসলিমা ছাড়া কাউকে নিতে পারেনি সে।
সেখানে নেয়ার পর সব কাগজ কেড়ে নিয়ে এক সৌদি নাগরিকের কাছে তাসলিমাকে বিক্রি করে দেয় আলম। এরপর থেকেই তাসলিমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ওই বাড়ির ৬ পুরুষ মিলে প্রায়ই তাঁর ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। যন্ত্রনায় তাসলিমার আত্মচিৎকার প্রতিধ্বনি হয় বন্দি ঘরে। ১২ বছর পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পাননি। কিছু বললেই বেড়ে যেত নির্যাতনের মাত্রা। বেতন তো দূরের কথা, ঠিক মতো জুটনা খাবারও। মুখ বুজে তাই সহ্য করতে হয়েছে সব নির্যাতন। অবশেষে সুযোগ পান বাংলাদেশে যোগাযোগের। বাবাকে মোবাইল ফোনে খুলে বলেন সব কথা।
তাসলিমার বাবা জানান, গত ১২ বছরে মেয়ের বেতন বাবদ প্রায় ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে আলম। এদিকে, ওই নারীকে নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে ভিসা প্রদানকারী সৌদি ব্যক্তি প্রতারক আলমের বিরুদ্ধে সৌদি আইন অনুসারে মানব পাচার ও বেতনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মামলা করেন। মামলার পর আলম সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার মানব পাচারকারী আলমসহ ৩ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে নাঙ্গলকোট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন তাসলিমার বাবা। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল ইসলাম।
No comments:
Post a Comment