শৃঙ্খলার বেড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন সৌদি নারীরা। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে মুক্ত জীবনের আলোর দেখা পেয়েছেন তাঁরা। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের গোঁড়া ধর্মীয় রীতিনীতি ও সামাজিক সংস্কারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সৌদি অর্থনীতিকে তেল নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এছাড়া তাঁর সংস্কারের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা এরই মধ্যে গাড়ি চালানো ও স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার অনুমতি পেয়েছেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বন্ধ থাকা চলচ্চিত্র প্রদর্শনও শুরু হয়েছে দেশটিতে। শুধু তাই নয়, নারীদের কালো পোশাকে থাকার বাধ্যবাধকতার রীতি থেকে বেরিয়ে গত মাসে ধূসর রংয়ের স্পোর্টস পোশাকে রাস্তায় নামেন নারীরা।
এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে, নারীরা পুরোপুরি পুরুষের সমান উল্লেখ করে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি যুবরাজ। সৌদি নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম জারি করার জন্য সৌদি সরকার কাজ করছে বলেও জানান দেশটির প্রভাবশালী এই যুবরাজ।
মুসলিম কট্টরপন্থি দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবে বাদশাহ সালমানের শাসনামলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে চোখে পড়ার মতো কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে সৌদি নারীদের বোরকা পরাতেও।
সৌদি আরবের একজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা বলেছেন, সেদেশে মেয়েদের ‘আবায়া’ বা বোরকা পরতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মেয়েদের আব্রু বজায় রেখে পোশাক পরতে হবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের আবায়া পরতে হবে।
সৌদি আরবে মেয়েরা পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে রাখা যে ঢিলেঢালা আচ্ছাদন ব্যবহার করেন, তাকে আবায়া বলে। সেখানে এটি পরা আইনত বাধ্যতামূলক। কিন্তু সৌদি আরবের ‘কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস’- এর সদস্য শেখ আবদুল্লাহ আল মুতলাক বলেছেন, আবায়া বা বোরকার খুব একটা প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের ৯০ শতাংশ মহিলাই ‘আবায়া’ পরেন না। কাজেই আমাদেরও উচিত হবে না মেয়েদের এটা পরতে বাধ্য করা।’
‘ভিশন- ২০৩০’ নামে একটি সংস্কার কর্মসূচি শুরু করেছে সৌদি আরব। এর আওতায় কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ২২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট জনশক্তির এক-তৃতীয়াংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চলতি মাসে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয় প্রথমবারের মতো নারী তদন্তকারী নিয়োগ দেয়া হবে।
এছাড়া, বিমানবন্দর ও সীমান্তে প্রথমবারের মতো ১৪০ জন নারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল সরকার। এক লাখেরও বেশি নারী এতে আবেদন করেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান নারীদের উপর থাকা সব রকমের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ আগামী জুন থেকে তা কার্যকর হবে৷
No comments:
Post a Comment