দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে নির্মাণশিল্প। তবে এর জন্য দেশটিকে নির্ভর করতে হচ্ছে প্রচুর বিদেশি শ্রমিকের ওপর। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের জুনের এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন থেকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০ শ্রমিক দেশটির নির্মাণশিল্পে নিয়োজিত। তবে বর্তমানে আইনের নানান মারপ্যাঁচে অন্য দেশের শ্রমবাজারের তুলনায় দেশটিতে প্রবাসীদের কাজ পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি বৈধ প্রবাসীদেরও পড়তে হচ্ছে নানান জটিলতায়।
কাজের নিয়ম, সময়সীমা ও কাজ পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে সিঙ্গাপুরে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অনেক বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি মোয়াজ্জেম হোসেন (৪৭) জানান, প্রতিমাসে এক হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। অথচ পৌঁছানোর পর তিনি দিনপ্রতি মাত্র ২০ সিঙ্গাপুরি ডলার পেলেন। এছাড়াও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শুরুর কয়েক মাস তাঁকে সর্বোচ্চ ৩০০ সিঙ্গাপুরি ডলার দিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে তারা প্রায় সাড়ে চার হাজার নিয়োগকারীর বিরুদ্ধে বেতনসংক্রান্ত নয় হাজার অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ও বিদেশি কর্মী রয়েছেন। সিঙ্গাপুরের জনশক্তিমন্ত্রী লিম সুয়ে জানান, চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করায় গত তিন বছরে ১৫৮ জন নিয়োগকারী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ প্রসংঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, যেসব নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করে শ্রমিকদের পাওনা দিতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা চালায়।
এ বছরের শুরুর দিকে আইওএম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসী শ্রমিকদের সিঙ্গাপুরে কাজ পেতে এজেন্টদের বা রিক্রুটমেন্ট ফি বাবদ ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার দিতে হয়। এই ফি দিতে গিয়ে অনেক শ্রমিককে তাঁদের ভিটে-বাড়ি, গয়না বিক্রি, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার বা ব্যাংকঋণ পযর্ন্ত করতে হয়।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, বৈধ বেতনধারী সব শ্রমিকেরই নিয়োগদাতা পরিবর্তনের অধিকার রয়েছে। তবে এসব অভিবাসী শ্রমিকের সহায়তাকারী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা জানান, এটা সব সময় সম্ভব হয় না। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ছয়শ’ অভিবাসী শ্রমিক তাঁদের নিয়োগদাতা পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। যার অর্ধেকও এখনো নতুন কাজের সন্ধান পাননি।
No comments:
Post a Comment