নেপাল ও বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বলেছে, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজটিতে কোন ধরনের টেকনিক্যাল (যান্ত্রিক) ক্রুটি ছিলো না। তাছাড়া ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন পাইলট আবিদ সুলতান শারীরিক ও মানষিকভাবেও সর্ম্পূণ সুস্থ ছিলেন। অবসাদগ্রস্ত কিংবা তাকে জোর করে ফ্লাইটে পাঠানোর প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর। তবে এয়ারক্রাফট বিধ্বস্তের পর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি নেপালের তদন্ত কমিশনের দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভেতরে কিছুটা অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করছেন ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ এসব কথা বলেন। এসময় এয়ারলাইন্সের প্রকৌশলী ছাড়াও ডিজিএম (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইমরান আসিফ।
তিনি তার বক্তব্য বলেন, একজন পাইলট আন্তর্জাতিক আইনে ১১ ঘন্টা ফ্লাই করতে পারেন। ওইদিন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান কাঠমান্ডু থেকে ফিরে এলে তার ফ্লাইং আওয়ার হতো ৭ ঘন্টারও কম। তারপরও পাইলট মাঝ আকাশে উড্ডয়ন নিয়ে কোন ধরনের সন্দেহে পড়লে তিনি বিমান ফিরিয়ে আনতে পারেন। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বে অহরহ ঘটে থাকে। ক্যাপ্টেন আবিদের দুঘটনা পূর্ববর্তী সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্টটিতে তিনি ফ্লাই করার জন্য ফিট ছিলেন।
লিখিত বক্তব্য বলা হয়, দুঘটনার এক মাস পর নেপাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি প্রাথমিক একটি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুঘটনায় পতিত হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিনির্বাপন কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত বিমান যাত্রীদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি তাতে আমাদের ধারনা, যদি ২ মিনিটের মধ্যে উর্দ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করতেন তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরো কম হতো।
দুর্ঘটনার আগে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার (এটিসি) থেকে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনাবলী দেযা হয়েছিল বলে ইতিমধ্যে দেশী বিদেশী সংবাদে বিষয়টি চলে এসেছে। কাঠমান্ডুর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ইউএস-বাংলার বৈমানিককে ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স প্রদান করার পর সেই ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই এয়ারক্রাফটটিকে অন্যত্র অবতরন করতেও দেয়া হয়। একটি ফ্লাইটকে দেয়া ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই অন্য ফ্লাইটকে অবতরন বা উড্ডয়ন করতে দেয়াও আন্তর্জাতিক নিয়মের ব্যতয় বলে আমরা জানি।
ইমরান ত্রিভ’বন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বিশ্বের অন্যতম ঝুকিপূর্ণ একটি এয়ারপোর্ট। এ পর্যন্ত অসংখ্য বিমান এখানে দুঘটনায় পড়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, নেপালের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে ১২ মার্চ দুর্ঘটনার পূর্ব মুহুর্তে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে ইউএস বাংলার বিমানের যোগাযোগে ক্রটির বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই সময় ২৫ সেকেন্ডের জন্য টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ ছিলো না। কিন্তু সেটিই স্বাভাবিক। কেননা সাধারণত ফাইনাল ল্যান্ডিং এ্যাপ্রোচের সময় টাওয়ারের সাথে পাইলটের কথাবার্তা হয় না।
আর বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিমানটি অবতরনের সময় অ্যালাইনমেন্ট সঠিক ছিলো না বলে যে কথা বলা হয়েছে তা-ও সঠিক নয়। কারণ নেপালের তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এ ধরনের কোন কথাই বলা হয়নি। আর দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বরত ৬ জন কন্ট্রোলকে তড়িঘড়ি করে দুঘটনার পরই অন্যত্র বদলী করেন নেপাল এয়ারপোর্ট অথরিটি। কেনো তাদের বদলী করা হলো তা আমরা জানি না। ওই সময়ের এমন পদক্ষেপ স্বাভাবিক নয় বলে আমরা মনে করি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কলেন, সকলের প্রতি আস্থা রেখে বলছি, রিপোর্টে যেসব বিষয় কভার করার কথা ছিল- তা হয়নি। রিপোর্ট মানছি না- তা আমি বলব না। তবে রিপোর্টে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।
উল্লেখ্য ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ ফ্লাইট বিএস ২১১ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে পাইলট কেবিন ক্রসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে হয় কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার মুহুর্তে ছিটকে বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে পাইলটসহ ৫০ যাত্রী নিহত হন। এরমধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশী।
উল্লেখ্য ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ ফ্লাইট বিএস ২১১ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে পাইলট কেবিন ক্রসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে হয় কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার মুহুর্তে ছিটকে বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে পাইলটসহ ৫০ যাত্রী নিহত হন। এরমধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশী।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দুর্ঘটনার পর এক মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গত ৯ এপ্রিল ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন।
সেখানে বলা হয়, ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রানওয়ের একপাশে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে পাইলটের সাথে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) যোগাযোগ ‘স্বাভাবিক ছিল’ না। পাইলট ও টাওয়ারের মধ্যে শেষ সময়ের যোগযোগের কি সমস্যা হয়েছিল, ঠিক কি কারণে উড়োজাহজটি দুর্ঘটনায় পড়ে- এসব বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তদন্ত কমিশন। ওই কমিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশন কনসালটেন্ট সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে কমিশনের চুড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রিভুবনের রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে ও অবতরণক্ষেত্র ওই মডেলের উড়োজাহাজ নামার জন্য উপযুক্ত ছিল। অগ্নিনির্বাপনকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যেই জলন্ত বিমানটির কাছে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছিলেন। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার কানাডায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খোঁজার কাজ চলছে।
No comments:
Post a Comment