Social Icons

Friday, April 1, 2016

সংঘর্ষ ও দখলের ভোট: সহিংসতায় ঢাবি শিক্ষার্থী, নারী-শিশুসহ নিহত ১০

প্রথম ধাপের মতোই ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার মধ্য দিয়ে বৃস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইপি) নির্বাচন শেষ হয়েছে।
এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও এক নারীসহ ছয় জেলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। হামলা, গুলি, বোমা, ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ নানাভাবে আহত হয়েছেন শ্রীবরদীর ইউএনওসহ চার শতাধিক মানুষ।
বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট, বিরোধীদের এজেন্ট বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করা হয়। জাল ভোট দেয়ার সময় ৩০ জনকে আটক করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কিছু কেন্দ্রে নানা অনিয়মের কারণে আটকৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাবার সঙ্গে ভোট দেখতে গিয়েছিল ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শুভ কাজী। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এদের একজনের গুলিতে নিহত হয় শুভ কাজী নামের এই শিশু।
মাদারীপুরের ধুরাইলে পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সূজন মৃধা নিহত হয়েছেন। তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে নমেছা বেগম নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিনজন।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচরা ইউনিয়নে হামলা ও সংঘর্ষের মাঝে পড়ে নিহত হন আবদুস সাত্তার নামের এক ফেরিওয়ালা। লেবুতলা
ইউনিয়নে বুধবার রাতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত দু’জন ভোরে মারা গেছেন।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় ইটের আঘাতে মারা গেছেন একজন।
বৃহস্পতিবার দলীয় প্রতীকে দ্বিতীয় ধাপে ৪৭টি জেলায় ইউপি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি, বোমা, ভাংচুর ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের দলীয় অথবা বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
দিনের শুরুতে কিছু এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্র দখল, কেন্দ্র থেকে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেয়া, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোট দেয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন স্থান থেকে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় কেন্দ্রে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। গুলিতে শুভ কাজী (৯) নামে এক শিশু নিহত হয়। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ নেতা রানা মোল্লা ও তার সহযোগীরা জাল ভোট দিতে বাধা পেয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন।
শুভর চাচা নুরুল কাজী জানান, শুভর বাবার নাম আবদুল হালিম। তাদের বাড়ি মধুরচর গ্রামে। সে ভোট কেন্দ্রের ওই স্কুলেই চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত। তার বাবা সিএনজিচালক। নিজের স্কুলে ভোট কেন্দ্র তাই বাবার সঙ্গে ভোট দেখতে যায় শুভ।
শুভর বাবা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। এ সময় শুভ বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। ভোট না দিয়েই বেরিয়ে এসে দেখি শুভ গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’
চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ: চরবাউরিয়া ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পুলিশসহ ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দু’জন এবং পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও একজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- মৃত শাহ আলমের ছেল জামাল, মৃত মোজাফ্ফর আহাম্মদের ছেলে সানাউল্ল্যা ও ইব্রাহীম। এরা সবাই বাউরিয়ার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পুলিশসহ ১৪ জন আহত হাতপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রে সহিংতায় আরও ৩৬ জন আহত হয়েছেন। হরিশপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল হান্নান রানা ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএ সালাম গুরুতর আহত হয়েছেন।
সীতাকুণ্ডে সহিংসতায় ১২ জন আহত হয়েছেন। এর জের ধরে সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেড় ঘণ্টা অবরোধ করেন প্রার্থীর লোকজন। মিরসরাইয়ে ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
জামালপুর: মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুরচর স. প্রা. বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার প্রার্থী মর্জিনা বেগমের ও মেম্বার প্রার্থী ওয়াহেদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নিক্ষেপ করা ইটের আঘাতে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
তবে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিমুল ইসলাম জানান, রফিকুল ইসলাম হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
নয়ানগর ইউনিয়নে ৩টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন একজন।
যশোর: বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের চাঁচড়া ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমাবাজি ও গোলাগুলিতে আবদুস সাত্তার বিশে (৭০) নামে এক ফেরিওয়ালা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহত আবদুস সাত্তার বিশে শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাদাম বিক্রেতা আবদুস সাত্তারের কপালে গুলি ও শরীরে বোমা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, স্থানীয় বিল্লাল মেম্বার ও লালের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
ভোট কারচুপিতে সহযোগিতার অভিযোগে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা তিন প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া নওয়াপাড়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আহত দু’জনের মৃত্যু: এদিকে সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে তারা মারা যান।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের ইবাদুল ইসলাম ও সবুজ।
মাদারীপুর: সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদে ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বিরঙ্গল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থী আবদুল মোতালেব মৃধা ও আয়ুবালী ফকিরের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়।
এ সময় পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিতে সুজন মৃধা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
সুজনের বাড়ি ধুরাইলের দক্ষিণ বিরঙ্গল গ্রামে। তার বাবার নাম বাচ্চু মৃধা। সুজন মেম্বার প্রার্থী আবদুল মোতালেব মৃধার নাতি।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে এক মেম্বার প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার অভিযোগ এনে নমেছা বেগম (৫৫) নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। থানার ওসি নাজমুল নিশাদ এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে ৮টায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
শেরপুর: শেরপুরের শ্রীবরদীর ইউএনওর গাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। এতে ইউএনও হাবিবা শারমিন ও তার গাড়িচালক মিন্টু মিয়া আহত হয়েছেন। তারা দু’জনেই শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। সিংগাবরুনা ইউনিয়ন থেকে ফেরার পথে রাত ৮টার দিকে গড়খোলায় তারা হামলার শিকার হন। জেলা প্রশাসক ডা. এএম পারভেজ রহিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ: কোম্পানীগঞ্জে ৮টি ইউনিয়নে ব্যাপক সহিংসতা, বোমাবাজি, গোলাগুলি হামলা-পাল্টাহামলা, ব্যালট বাক্স ভাংচুর ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কবিরহাট উপজেলায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১০ জন।
চাঁদপুর: চাঁদপুর ও হাইমচরের ১৮টি ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভিন্ন কেন্দ্রে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার ১টি, নকলা উপজেলার ৯টি ও শ্রীবরদী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে জাল ভোট দেয়ার সময় পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাসান ঈমাম বাবুর ছোট ভাই সৈয়দ হুমায়ুন ঈমাম সিরাজ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুর: ঘটমাঝিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান দর্জির সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পাঁচখোলা ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী আবদুর রশিদ প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর ও পীরগঞ্জ: পীরগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ের ভোট কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ-টিয়ার শেল ও ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। একাধিক কেন্দ্রে নৌকা মার্কায় জাল ভোট দিতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও পরে দলীয় নেতারা তাদের ছাড়িয়ে নেন।
মাগুরা: মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মুক্তার হোসেনের ওপর নৌকার সমর্থক হারুনের নেতৃত্বে হামলায় মুক্তারসহ চারজন আহত হয়েছেন।
পাবনা: পাবনার ফরিদপুর এবং ভাঙ্গুরা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হয়েছে। বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২টি ককটেলসহ পাঁচজনকে আটক করেছে।
সিলেট: বিভাগের ৬ উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে জাল ভোট দেয়ার সময় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন ও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। দুপুরে উপজেলার বর্নি ইউনিয়নে সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রে ঢুকে পোলিং অফিসারদের ভয় দেখিয়ে ফুটবল ও নৌকা প্রতীকে সিল মারে। পরে পুলিশ ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
কিশোরগঞ্জ: বাজিতপুর উপজেলার হিলছিয়া ইউনিয়নে গুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর কবিরকে তাড়া করে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
পঞ্চগড়: বোদা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাই ও বিএনপির পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। এ ছাড়া ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে।
বগুড়া: সোনাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ২-৩টি কেন্দ্রে হাতাহাতি ও ছুরিকাঘাতে তিনজন আহত হয়েছেন।
নাটোর: লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করায় আওয়ামী লীগের ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল। সংঘর্ষে আহত হয়েছে ৮ জন। অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের শ্রীরামগাড়ি রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রে ২৪৬টি ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ সময় প্রিসাইডিং অফিসার মতিউর রহমানকে মারপিটও করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ: সদর উপজেলার কাউয়াখোলা ইউনিয়নের বড়কয়ড়া কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। এ সময় তারা ৯শ’ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বহুলী ইউনিয়নে ধীতপুর কেন্দ্রে ২শ’ ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। খোকশাবাড়ি কেন্দ্রে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করায় একজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মেহেরপুর: সদর উপজলার মোনাখালী ইউনিয়নে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে স্কুলছাত্রকে আটক করে পুলিশ। আটক সোহাগ হোসেন বিশ্বনাথপুর গ্রামের রাজু আহমেদের ছেলে। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। গুলি, ধাওয়াপাল্টা-ধাওয়া, কেন্দ্রে যেতে বাধাসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে মুজিবনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নির্বাচন শেষ হয়েছে। মহানজনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের লোকজন ব্যালট ছিনতাই চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
ময়মনসিংহ ও গৌরীপুর: গৌরীপুর সদর ও গৌরীপুর ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ বিরোধী সব প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয় হয়।
কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর: দৌলতপুর উপজেলায় ভোট দিতে বাধা, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলি করে। আল্লারদর্গা, আড়িয়া ও মরিচা ইউনিয়নে এসব সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়। পিয়ারপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু ইউসুফ লালুর সমর্থকরা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেলে পুলিশ চার রাউন্ড গুলি করে। ভেড়ামারার ছয়টি ইউনিয়নে বিএনপির দুই এজেন্টকে ঢুকতে না দেয়া এবং ১৩ এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে সিল মারা হয়েছে নৌকা ও মশালের পক্ষে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর ও আশুগঞ্জ: নবীনগর উপজেলার ককটেল ফাটিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা জোর করে ভোট দেয়। এ সময় বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছে পাঁচজন। ২২ মার্চের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট এবং অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): সীতাকুণ্ড উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থীর কর্মীরা আগের রাতেই ব্যালটে সিল, কারচুপি, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখল করেছে। এ সময় কয়েকটি স্থানে গোলযোগে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এসব অভিযোগে বিএনপি সব ইউনিয়নে ফের তফসিল ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
ভোলা, চরফ্যাশন, লালমোহন ও মনপুরা: জেলার চারটি উপজেলায় ১২ ইউনিয়ন নির্বাচনে এজেন্টদের বের করে দেয়া ও সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে শতাধিক। এর মধ্যে পুলিশের শটগানের গুলিতে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার আফজাল হোসেনসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে আহত লিমা নামে এক কিশোরীর অবস্থা আশংকাজনক।
কুমিল্লা ও বরুড়া: ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে জাল ভোটের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। এতে আহত হয়েছে ১৫ জন। বরুড়ায় সংঘর্ষে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা দুইশ’ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। ২৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৬ জনকে আটকের পর ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কুড়িগ্রাম: ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
সুনামগঞ্জ : ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ চারজন আহত হয়েছে। ধনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ও কালীগঞ্জ: ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, জালভোট, জালিয়াতি, এজেন্টদের বের করে দেয়া, বর্জন, জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারার মধ্যদিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে।
নরসিংদী: সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভোট ডাকাতি, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে শিবপুর ও বেলাব উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে। এতে ১০ জন আহত হয়েছে।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার): বড়লেখায় কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। গ্রেফতার করে তিন ব্যক্তিকে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ক্যাডাররা জাল ভোট ও ব্যালট পেপার লুটের চেষ্টা করে। পুলিশ সিল মারা ৩১টি ব্যালট পেপার উদ্ধার করে।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ): এজেন্টদের বের করে দেয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটের মহোৎসব হয়েছে সিরাজদিখানের চারটি ইউনিয়নে। দিনের প্রথমভাগেই ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কর্মকর্তাদের সামনেই তারা ছিনিয়ে নেয় ব্যালট পেপার।
টাঙ্গাইল: ভুয়াপুর উপজেলার পলোয়া ইউনিয়নের বারৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ. হামিদ ভোলাসহ ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates