প্রায় দেড় যুগ আগে গুলশানের নিজ বাড়িতে শাজনীন তাসনিম রহমানকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত শহীদুলের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপর চার আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার সকালে এই রায় দেন। খালাস প্রাপ্তরা হলেন, হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন।
গত ১১ই মে আপিলের ওপর শুনানি গ্রহন করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। তিন মাস পর আসামিদের আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য তা কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ওই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
রায়ের পর আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, এই মামলায় একমাত্র স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে আসামি শহীদুল। আদালত তার ফাঁসির রায় বহাল রেখেছ। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় দৃঢ়তার সঙ্গে যে ন্যায় বিচার করেছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এস এম শাজাহান বলেন, এই হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি করেছিলেন শাজনীনের পিতা লতিফুর রহমান। সেটি দণ্ড বিধির ৩০২ ধারায় দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলাটির তদন্ত চলা অবস্থায় সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজ রায়ে বলেছেন, একই ঘটনায় দুটি মামলা হতে পারে না। কারণ এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার দুটি মামলারই অভিযোগ একই। ফলে প্রথম মামলাটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন শাজনীন তাসনিম রহমান। এ ঘটনায় পরদিন শাজনীনের বাবা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে সিআইডি। তদন্ত শেষে প্রথম মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এবং দ্বিতীয় মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুটি মামলাতেই আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে ছয় আসামিকেই ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর এই মামলার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য হাইকোর্টে যায়। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল করেন। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট পাঁচ আসামি হাসান, শহীদ, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। তবে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আরেক আসামি শনিরামকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন চার আসামি হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল সাজাপ্রাপ্ত চার আসামির লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। ফাঁসির আদেশ পাওয়া আরেক আসামি শহীদ জেল আপিল করেন। প্রায় সাত বছর পর ২৯ মার্চ আপিল বিভাগে ওই পাঁচ আসামির আপিলের শুনানি একসঙ্গে শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাদীপক্ষে সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন, এএসএম মুবিন এবং আসামিপক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান শুনানি করেন। শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখে আপিল বিভাগ।
No comments:
Post a Comment