ব্যাগ গোছানো আছে, আর একটু পরেই বেরিয়ে পড়বো নতুন এডভেঞ্চারের খোঁজে, এই অনুভূতির মতো দারুণ অনুভূতি মনে হয় না আর কোন কাজে হয়! ভ্রমণ আমাদেরকে সম্মুখীন করে এমনই মজার সব অভিজ্ঞতার যা তেমন অতুলনীয় তেমনি তা জীবনে গাঢ় ছাপও ফেলে যায়। নিত্যদিন এই জীবনে কত কিছুই তো ঘটে। সবই কি আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে? খুব কম বিষয়ই এতটা শক্তিশালী হয়। ভ্রমণ তার মধ্যে অন্যতম।
ভ্রমণ আপনাকে সামাজিক প্রাণীতে পরিণত করে
আপনি একজন অন্তর্মুখী মানুষ? সবাই অসামাজিক বলে? সত্যি বলতে ভ্রমণপ্রিয়দের মাঝে অনেকেই শুরুতে অন্তর্মুখী হয়। নিজের মাঝে থাকতে ভালোবাসে তারা, ভালোবাসে মানুষ নয়, প্রকৃতির সাথে হৃদ্যতা তৈরি করতে। এমন মানুষই ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একসময় হয়ে ওঠেন অন্য যে কারও চেয়ে বেশি বেশি মিশুক, সামাজিক! নতুন নতুন জায়গায় গেলে সেই জায়গাকে জানতে, বুঝতে, নতুন সংস্কৃতিকে বুঝতে সেখানকার মানুষের সাথে তো মিশতেই হবে! সামাজিক না হয়ে উপায় কি!
সমুদ্রতলের সব রহস্য যখন ভেদ করে চলেছেন আপনি তখন মনে আর কীভাবে জমবে কুসংস্কার?
আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়
আপনার হীনমন্যতা, কোন কিছু করতে গেলে ঘাবড়ে যাওয়া, মনের দ্বন্দ্ব সবকিছুকে আত্মবিশ্বাসে পরিণত করতে পারে ভ্রমণ। কীভাবে? একজন ভ্রমণকারী প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের। একটি অসম্ভব পিচ্ছিল পাথর যা দেখলে মনে হয় কখনোই পার হওয়া সম্ভব নয়, তাও যখন সে দলের অন্যদের সহযোগিতা এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পার করে ফেলে তখন সে জেনে যায় জীবনে এমন আরও অনেককিছুই আছে, যা অসম্ভব বোধ হলেও আসলে জয় করা সম্ভব।
কুসংস্কার কেটে যায়, দৃষ্টিভঙ্গি উদার হয়
আমাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ আমাদের মাঝে সচেতন বা অসচেতনভাবে কিছু কুসংস্কার ঢুকিয়ে দেয়। ছেলেবেলায় মনে গেঁথে এসব কুসংস্কার বড়বেলাতেও যুক্তি-তর্কের জাল ভেদ করে রয়ে যায় মনের কোণে। মানুষকে বিচার করা, অন্যের জীবনে দখল দেওয়া, কিছু সামাজিক নিয়মের মানদণ্ডে সবকিছুকে পরিমাপ করা এই সবই আমাদেরকে গোড়া মানুষে পরিণত করে। আপনি যতই ভ্রমণ করবেন পরিচিত হবেন একেক দেশের একেক রীতিনীতির সাথে। আপনি দেখবেন, আপনি যাকে নিয়ম ভাবছিলেন, অন্য দেশে তা কোন ব্যাপারই না। আপনার মনে যেসব কুসংস্কার ভয়ের কারণ অন্য দেশে হয়ত তা রূপকথা, হাসির খোরাক মাত্র।
প্রকৃতির বিশালতা মনে করিয়ে দেয় জীবন কত বড়!
জ্ঞানের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হতে থাকে
যত ঘুরবেন তত জানবেন। আমরা মনে করি জ্ঞান আহরণের সবচেয়ে ভালো উপায় বই। বইয়ে জ্ঞান থাকে কাগজের পাতায়, সেখান থেকে যায় আমাদের মস্তিষ্কে। সেই জ্ঞান কখনো আমরা প্রয়োগ করি, কখনো করি না। হিসেব করলে দেখা যাবে, আমাদের এযাবৎ অর্জিত জ্ঞানের ৯০ শতাংশই আমরা কোন কাজে কখনো লাগাই নি। ভ্রমণে জ্ঞান অর্জনই হয় প্রয়োগ দিয়ে! আপনি কাজ করতে করতে শিখবেন। যতই আপনি আগে থেকে বইয়ে আ ইউ টিউবে আগুন জ্বালানো শিখে যান না কেন মূল শেখা হবে আপনার গভীর জঙ্গলেই! আর এই শেখার সাথে তুলনা নেই অন্য কোনও শিক্ষার।
বদলে যায় জীবনের মানে
জীবনের মানে কি? উদ্দেশ্য কি? সফল হওয়া? সফলতা কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে আমাদের সবার কাছেই। যার যার কাছে একটি ছকও আছে সে কীভাবে সফল হবে বা জীবনকে সার্থক করবে সেই বিষয়ে। সেই ছকটা বদলে দেবে ভ্রমণ। যে আপনি পরিকল্পনা করে রেখেছেন, ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত শুধু উপার্জন করবেন আর এরপর আয়েশ করে বাঁচবেন, একটা দুর্দান্ত ভ্রমণের পর সেই আপনারই মনে হবে, জীবন এই আজকে পরিপূর্ণরূপে বাঁচার মাঝেই। এর আর আগে বা পরে নেই। আবার ভিন্ন রকমও হতে পারে আপনার অনুভূতি। ভ্রমণ মানুষকে জীবনকে বোঝার ক্ষমতা দান করে। সেই ক্ষমতায় সে বুঝে নেয় তার কি চাই!
No comments:
Post a Comment