ঢাকা থেকে আমাদের ফটো সাংবাদিক মোঃ নুর হুসাইন --------
******************************************
ইফতারির শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পুরান ঢাকার চকবাজার। প্রতিবারের মতো এবারও জমে ওঠেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার। বাহারি ইফতারির পসরা সাজানো এ স্থানটিতে। বৈচিত্র্য আর ভিন্ন স্বাদের জন্য পুরো রাজধানীতে এখানকার ইফতারি বিশেষভাবে সমাদৃত।নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস চারদিকে। পাশাপাশি বিক্রেতার হাঁকডাক ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার চকের ইফতারির বাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য। এ এক অন্যরকম আমেজ।
সরেজমিনে চকবাজারে ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা বৈচিত্র্যে ভরপুর ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন টেবিলে। রয়েছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। রাস্তার ওপর বসা চকবাজার ইফতারির দোকানে মাথার ওপর নানা রঙের শামিয়ানা। চারদিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হৈ-হুল্লোড় আর হাঁকডাক।
বিক্রেতারা জানান, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বাড়ির তৈরি ইফতারির চেয়ে দোকানে তৈরি ইফতারি দিয়েই ইফতার করতে অভ্যস্ত। যে কারণে পুরো রমজান জুড়েই চকের ইফতারির বাজার থাকে সরগরম। তবে শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নন, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও রমজানে চকবাজার থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসেন। এবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এবার চকবাজারের চারদিকে কয়েক শত ইফতারির দোকান বসেছে। এসব দোকানে বিশাল শিকের সঙ্গে জড়ানো সুতি কাবাব, জালি কাবাব, শাকপুলি, টিকা কাবাব, ডিম চপ, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট,খাসির রানের রোস্ট, দইবড়া, মোল্লার হালিম, নূরানী লাচ্ছি, পনির, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং,ছানামাঠা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ, জালি কাবাব, পিঁয়াজু, আধা কেজি থেকে ৫ কেজি ওজনের জাম্বো সাইজ শাহী জিলাপিসহ নানা পদের খাবার সাজিয়ে বসে পড়েছেন বিক্রেতারা।
এ ছাড়া আতা, আনারস, আম, মালটা, খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, ঘোল, পিঠা-পায়েস, মিষ্টিসহ ইফতারের নানা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে।
তবে এ বাজারে সব থেকে আলোচিত পণ্য হচ্ছে 'বড় বাপের পোলায় খায়'। পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। এ খাবারটি মোট ৩৬টি পণ্য ও ১৮টি মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। গরুর মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডিম, আলু, ঘি, বুটের ডালসহ নানা পদের খাবার ও নানা ধরনের মসলার মিশ্রণে খাবারটি তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে খাসির কাবাব প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, গরুর কাবাবের কেজি ৬০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগি রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকা, কোয়েলের রোস্ট ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিকন জিলাপি কেজি ১২০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২০০ টাকা, দইবড়া কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চিকেন স্টিক ৭০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫ টাকা (প্রতি পিস), বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কিমা পরোটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টানা পরোটা ২০ টাকা পিস, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, সমুচা ৫ থেকে ১০ টাকা, পনির সমুচা ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, বেগুনি ৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ডাবাব খেজুর ১৬০ টাকা কেজি, বড়ই খেজুর প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, তিনিশীল খেজুর কেজি ৫০০ ও চুপরি খেজুর ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন দোকানিরা।
ঐতিহ্যবাহী ইফতারি কিনতে উত্তরা থেকে চকবাজারে এসেছেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, এখানকার ইফতার সামগ্রী অন্য সব জায়গার থেকে আলাদা। এখানের ইফতারি যে খায়নি সে বুঝবে না। তবে এবার ইফতার সামগ্রীর দাম গত বারের তুলনায় বেশি বলেও জানান তিনি।
আজিমপুর থেকে ইফতারি কিনতে আসা আসিফ সরদার বলেন, এখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাহারি ইফতারি বিক্রি হয়। তারপরও রমজানের যেকোনো একদিন চকবাজারে আসি ইফতারি কিনতে। কারণ, এখানে আসলে কেন জানি আলাদা এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। আর এখানে না এলে মনে হয় রমজানই শুরু হয়নি।
No comments:
Post a Comment