ইরান বিরোধী জোট গঠনের জন্য রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব-আমেরিকান বৈঠকের দশদিন পর ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তেহরান-মাস্কাট সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ঘটনাবলীই ইরান-ওমান সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাভি আরবি ভাষায় সম্প্রচারিত বিবিসি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সব বিষয়ে আমরা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছি। রিয়াদ বৈঠকের পর কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন ইরানের ব্যাপারে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও একই সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কাতার ও ওমান ইরানকে সমর্থন জানানো থেকে বোঝা যায়, সৌদি আরব এ অঞ্চলে কেবল তার বিদ্বেষী নীতি চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে এবং এ লক্ষ্যে অন্য আরব দেশকে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। কাতারের আমির ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে বলেছেন, তার দেশ মনে করে কোনো কিছুই তেহরান-দোহা সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। অন্যদিকে কুয়েতও ইরানের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
এসব পরিস্থিতির আলোকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওমান, কাতার ও কুয়েত ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা থেকে তাদের বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়, যারা কিনা ঐক্য ও গঠনমূলক সহযোগিতাকে আঞ্চলিক নানা সমস্যা ও পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি অবসানের একমাত্র পথ বলে মনে করে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বহুবার বলেছে, পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে তাদের মূল নীতি হচ্ছে, সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিত এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা গড়ে তোলা। ইরানের প্রেসিডেন্ট কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাতে এ বিষয়ে ইরানের অবস্থান তুলে ধরেন।
ইরান সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তার ঊর্ধ্বে উঠে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলে এসেছে। কেবল এ ধরণের সহযোগিতাই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী নিরাপত্তা ও সবার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। তেহরান মনে করে কয়েকটি দেশের কল্পিত শত্রু সৃষ্টি বিশেষ করে ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা এ অঞ্চলের সবার স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে কেবল মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং শত্রুরা এর সুযোগ নেবে।
ইরান আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে গত ২১মে রিয়াদে এমন সময় আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ইরান এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা কেবল নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে এবং অশুভ রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্যই রিয়াদে ওই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। হাজার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য করা এবং নিজেদের অর্থনীতির চাকাকে সচল করার জন্য আমেরিকা ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করে আসছে বহুদিন ধরে।
তাই রিয়াদ বৈঠক এ অঞ্চলের দেশগুলোর স্বার্থে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং এতে কেবল আরব ও ইরানের অভিন্ন শত্রুরাই লাভবান হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
No comments:
Post a Comment