আমেরিকার স্থানীয় আদি বাসিন্দা যারা, যারা প্রায় কয়েক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় আছে বলে ধারণা করা হয়, তাদেরকে সেই পনের শতকের শুরু থেকেই রেড ইন্ডিয়ান বলে ডাকা হয়। বিষয়টা একটু কৌতুহল উদ্দীপক। খোদ আমেরিকার স্থানীয় মানুষদের কেন ইন্ডিয়ান বলে ডাকা হচ্ছে!
নিজ গ্রাম থেকে দূরে রেড ইন্ডিয়ানরা, হয়ত খাবারের খোঁজে। ছবি: সংগৃহীত।
এই নামকরণের পেছনে আছে একজন বিখ্যাত মানুষের ছোট একটা ভুল। চোদ্দ শতকের শেষদিকে স্পেনের রানী ইসাবেলার অর্থানুকূল্যে ক্রিস্টোফার কলম্বাস জাহাজ নিয়ে বেড়িয়ে যান ভারতের সাথে সরাসরি সমুদ্রপথ খুঁজে বার করতে। কারণ স্থলপথে যেটুকু বাণিজ্য করা যাচ্ছিল ভারতের সাথে ইউরোপের, তাতে করে তাদের ভারতের অসাধারণ ঐশ্বর্যের প্রতি লোভ ক্রমাগতভাবে বেড়েই যাচ্ছিল। তাই কলম্বাস চেষ্টা করলেন সরাসরি সমুদ্রপথে যদি ভারতের সাথে ইউরোপের যোগাযোগ পথ আবিষ্কার করা যায়, তাহলে বাণিজ্য করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ভারত ভেবে তিনি আমেরিকায় নেমে পড়লেন। ছবি: সংগৃহীত।
এভাবে তিনি বের হয়ে পড়েন ভারত খুঁজতে এবং দিনের পর দিন তিনি সমুদ্রে চষে বেড়ান। এভাবেই একদিন তিনি ভুল করে পা রাখেন এক স্থলভূমিতে, বর্তমানে যেটাকে বলা হয় নর্থ আমেরিকা মহাদেশ। তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি ভারতের কোন এক এলাকায় পৌঁছেছেন, আর তাই তিনি এর স্থানীয়দের তার লগবুকে উল্লেখ করেন ইন্ডিয়ান হিসেবে। স্থানীয়দের চেহারায় লাল রং এর প্রকট প্রভাব দেখে তিনি তাদের উল্লেখ করেন রেড ইন্ডিয়ান হিসেবে এবং সেটাই একসময় তাদের নাম হয়ে যায়। পরবর্তী পাঁচশ বছর সবাই তাদের রেড ইন্ডিয়ান বলেই ডেকেছে।
যদিও কলম্বাস খুব দ্রুতই তার ভুল বুঝতে পারেন, কিন্তু ততোক্ষণে তার সঙ্গী-সাথীরাও এদেরকে রেড ইন্ডিয়ান ডাকতে শুরু করেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, যদিও ভুল করেই, তারপরেও কলম্বাস প্রথম আবিষ্কার করেন আমেরিকা। তবে তিনি তার আবিষ্কার নিয়ে খুব হইচই না করে ভারত খুঁজতে বেড়িয়ে যান আবার এবং একসময় ইটালিয়ান অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি এই মহাদেশে আসেন এবং নিজের নামে আমেরিকার নামকরণ করেন।
কলম্বাস যদি সে সময় বুঝতে পারতেন তার নতুন আবিষ্কৃত ভূমি কতটা বড়, কতটা সম্পদে পরিপূর্ণ. তাহলে হয়ত তিনি আর ভারতের সন্ধানে যেতেন না। হয়ত ইতিহাস ভিন্ন ভাবে লেখা হতে পারত।
No comments:
Post a Comment