Social Icons

Tuesday, May 23, 2017

প্রেমিককে দিয়ে স্বামী খুন, স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

এতটা ঠাণ্ডা মাথায় যে কাউকে খুন করা সম্ভব তা ভাবতেও পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। আর তাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের  হৃদয়পুরের তালতলা এলাকায় সরকারি ব্যবসায়ী অনুপম সিংহ (৩৫) নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী মনুয়া মজুমদারকে সন্দেহ করেনি কেউই।
শেষ পর্যন্তও হয়তো করতও না। যদি না পুলিশের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় মনুয়ার অন্য আরেকটি মোবাইল ফোনের হদিস মিলত। যে ফোনটি দিয়ে অভিযুক্ত নারী শুনেছিলেন স্বামীর শেষ আর্তচিৎকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের কথোপকথন রেকর্ডের পর অবশেষে স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নারী মনুয়া মজুমদার। রিমান্ডে নেওয়ার আটদিন পর তিনি এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ জানায়, প্রথমে অনুপম সিংহের মাথা রড দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল। আকস্মিক আক্রমণে অনুপমের চিৎকারে আকাশ ভারী তখন। এরপর আততায়ী পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা বের করে একটি নম্বরে ডায়াল করে ধরল আহত অনুপমের সামনে। অনুপমের আর্তচিৎকার মোবাইল ফোনে কেউ শুনছে!
এরপর রড দিয়ে অনুপমের মুখ থেঁতলে দিল আততায়ী। মোবাইল ফোন তখনো চালু। এরপর ভারী রড দিয়ে ভাঙা হলো অনুপমের নাক। তখনো থামেনি বছর পঁয়ত্রিশের যুবক অনুপমের বাঁচার আকুতি-গোঙানি। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে অনুপমের হাতের রগ কেটে দিল আততায়ী।
পুলিশ জানায়, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড চলাকালীন মোবাইল ফোনের অপরপ্রান্তে ছিল অনুপমের স্ত্রী মনুয়া। আর যে আততায়ী এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিল সে মনুয়ার পরকীয়া প্রেমিক অজিত। প্রেমিক অজিতের কাছে মনুয়ার আবদার ছিল স্বামীর শেষ মরণচিৎকার শোনা!
গত ২ মে হৃদয়পুরে নিজ বাসায় খুন হন অনুপম সিংহ (৩২)। হত্যাকাণ্ডের পর গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে পুলিশ নিহতের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও তাঁর প্রেমিক অজিত রায়কে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের কাছ থেকেই ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
জানা যায়, অনুপমের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশে। বেশ কয়েক বছর আগে অনুপম ভারতে এসে বারাসতের হৃদয়পুরে নিজে বাড়ি করেন। কলকাতার একটি মানি এক্সচেঞ্জারের পাশাপাশি ট্রাভেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অনুপম। টানা ছয় বছর ধরে প্রেম করার পর বছর দেড়েক আগে মনুয়াকে বিয়ে করেন অনুপম। মনুয়ার বাড়ি বারাসতের নবপল্লী এলাকায়।
এদিকে অনুপমের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করলেও কলেজ জীবনের বন্ধু অজিত রায়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন মনুয়া। অজিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরের বাসিন্দা। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি অনুপম।
পুলিশ জানায়, মাস খানেক আগে অনুপমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন অজিত ও মনুয়া। উভয়ে মনে করছিলেন তাঁদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুপম।
গত ২ মে সন্ধ্যায় অফিস থেকে বারাসতের নবপল্লীতে শ্বশুরবাড়ি যান অনুপম। রাতে শ্বশুরবাড়িতে খাওয়া দাওয়া সেরে একাই হৃদয়পুরের বাড়িতে ফিরে আসেন। মনুয়া ওই রাতে স্বামী অনুপমের সঙ্গে বাড়িতে ফেরেননি।
ওই রাতেই অনুপমের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন অজিত। অনুপম ঘরে ঢোকার পরই রড দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে অজিত। এরপর ওই রড দিয়ে পিটিয়ে অনুপমকে হত্যা করা হয়। আর দূরে বসে মোবাইল ফোনে অনুপমের শেষ চিৎকার শোনেন মনুয়া।
চলে যাওয়ার সময় অনুপমের আঙুলের আংটিটি নিয়ে যায় অজিত। ওই আংটির সূত্র ধরেই খুনের কিনারা পায় পুলিশ।
এদিকে খুনের পর সারারাত ফোনে তাঁকে না-পাওয়ায় পরের দিন সকালে বাড়িতে পৌঁছান এক আত্মীয়। বার বার কলিং বেল বাজিয়েও সাড়া না-পাওয়ায় দরজা ধাক্কা দিতে বোঝেন ভেজানো ছিল সেটি। ভিতরে ঢুকে দেখেন ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে অনুপমের রক্তাক্ত দেহ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, খুনের পর মনুয়া এত ঠান্ডা ছিল যে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে আসলে ওই ছিল অনুপম হত্যাকাণ্ডের নাটের গুরু!
মনুয়া ও অজিতের বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও অপরাধমূলক ষড়‌যন্ত্রের ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates