এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে থেকে জুন মাস পযর্ন্ত ই-কার্ডের মাধ্যমে অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হবার সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া। জুন মাসে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ই-কার্ড নিবন্ধন কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ প্রবাসীদের আটক করা শুরু করে। মালয়েশিয়ার সরকারী হিসেবে এখন পযন্ত ১৯ হাজার অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ও ৪২৭ জন শ্রমিক নিয়োগকারীকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক মোস্তফার আলী এ তথ্য জানান।
মোস্তফার আলী জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ৮৫০ ও অক্টোবরে এক হাজার ৩২৭টি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ শ্রমিক ও নিয়োগকারীদের আটক করা হয়। এর আগে অবৈধ শ্রমিকদের ই-কার্ড ও রি হায়ারিং প্রোগ্রামে নিবন্ধনের জন্য বারবার আহ্বান জানানো হয়। সে সময় তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘বিদেশি শ্রমিকরা আমাদের দেশে অবস্থান করছেন উপার্জনের জন্য। আমরা চাই, এখানে শ্রমিকরা বৈধভাবে কাজ করুক। কিন্তু বারবার বলার পরও তারা বৈধ হচ্ছে না। কর্মফলের কারণেই তাদের আটক হচ্ছে। এর জন্য শ্রমিকরাই দায়ী।’
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী শ্রমিকদের ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও এ সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয় বেশির ভাগ বিদেশি শ্রমিক। দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈধতার সুযোগ নেওয়া শ্রমিকের হার মাত্র ৩০ শতাংশ। এখনো মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করছেন প্রায় তিন লাখ প্রবাসী শ্রমিক।
এদিকে এই অবৈধ শ্রমিকের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে মালয়েশিয়ায় । তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুতই বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে আমাদের শ্রমবাজার। তাই এই বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীরা বৈধ হবার জন্য ই-কার্ড বা রি-হায়ারিংয়ের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে গিয়ে অবৈধ প্রবাসীদের আবেদন করা একটু কঠিন। কারণ এলাকাটি বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টিত। ফলে অনেক অবৈধ প্রবাসী দালালদের মাধ্যমে ই-কার্ড করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু দালাল ই-কার্ডের জন্য নিদিষ্ট টাকা নিলেও অনেকের কাজ করে দেয়নি। যার কারণে তারা ই-কার্ডের তালিকা থেকে বাদ যায়।
রাসেল আরও বলে, অবৈধদের ধরপাকড়ের সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর মালয়েশিয়ায় বৈঠকের মাধ্যমে ধরপাকড় বন্ধ করে মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু আবারও মালয়েশিয়ার পুলিশ নানা ভাবে অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ প্রবাসীদের পাশাপাশি বৈধ প্রবাসীদেরও নানাভাবে হয়রানি করছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের ধরপাকড় কিছুটা বন্ধ করলেও বাংলাদেশিদের ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশিদের আটক করতে পারলে অনেক দ্রুত তাদের থেকে ঘুষ নেওয়া সম্ভব। যা অন্য দেশের প্রবাসীদের থেকে নেওয়া সম্ভব হয় না।
তাই তিনি বলেন, অতিদ্রুত এ বিষয়গুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশি দূতাবাসের। আর তা না সম্ভব হলে অবৈধ প্রবাসীদের পাশাপাশি বৈধ প্রবাসীরাও নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েবে। যা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে একই সাথে আমাদের শ্রমবাজারের এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
No comments:
Post a Comment