বাংলাদেশের বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু বিনিয়োগ থাকলেও সে দেশের বাজারে জায়গা পায় না বাংলাদেশের পণ্য। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় যখন অর্থমূল্যে খুব বেশি নয়। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে অনেক বেশি। আর এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির চিত্রও হতাশাজনক। তবে নির্মান ও কৃষিখাতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে বোয়েসেলের মাধ্যমে নির্মাণ ও কৃষি খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি জানা যায়। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বা প্রাসঙ্গিক আইন অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে যে সকল বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফেরার ‘গ্যারান্টি বিমা’ এবং ‘রিটার্ন কষ্ট’ বিমা দাবি না করে দক্ষিণ কোরিয়া ছেড়ে এসেছেন এমন ২২৭ জন কর্মিকে বিমার আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি পন্যের আরো শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আর এ সুবিধা পেলে ওই দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার বাজারকে টার্গেট করেও দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব।
এ জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট দূর করা এবং বাণিজ্য সুবিধা দিতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী; কিন্তু বাংলাদেশই সেই সুযোগ নিতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগসুবিধা সম্পর্কে জেনে কোরিয়ার উদ্যোক্তারা আরো বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশ অল্প পরিমাণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তামার তার, ওভেন গার্মেন্ট, পাট ও পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্রাফটস রপ্তানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য, যেমন_বেইস মেটাল, যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য, গাড়ি ও উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল যন্ত্রাংশসহ খাদ্য ও পানীয় আমদানি করছে। আগে এসব পণ্যের বেশির ভাগই জাপান থেকে আমদানি করত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার এসব পণ্যের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। তবে গুণগত মানের দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্য এগিয়ে থাকায় এর দামও বেশি।
বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ প্রায় ১০০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে (ইপিজেড) সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। মূলত টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ, ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ ও জাহাজ নির্মাণ খাতে দক্ষিণ কোরিয়া বিনিয়োগ করেছে। কয়লাখনির উন্নয়ন ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে দেশটির। তবে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রাপ্তি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং রেমিটেন্সে প্রাপ্তির এই হার আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা ক্রমেই বাড়ছে।
No comments:
Post a Comment